দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ এপ্রিল: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University)- এর গ্রিন ক্যাম্পাসে (Green Campus) দেখা মিললো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী সজারু (Indian Crested Porcupine/ Hystrix Indica)-র। বাংলায় এই প্রজাতির সজারুকে দেশি সজারু বা ভারতীয় ঝুটিযুক্ত সজারু বলা হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা (Botany) বিভাগের অধ্যাপক ড. অমল কুমার মন্ডল। শনিবার তিনি ‘বেঙ্গল পোস্ট‘-কে জানিয়েছেন, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের উদ্ভিদবিদ্যা ও বনবিদ্যা বিভাগের যথাক্রমে- এ্যাঞ্জিওস্পার্ম টযাক্সোন্মি এবং মলিকিউলার সিস্টেমেস্টিক্স স্পেশাল পেপারের ছাত্র মনোরঞ্জন মাইতি এবং প্রাণীবিদ্যা (Zoology) বিভাগের অরূপ মাইতি গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ৪ মে রাত্রি ১০ টা নাগাদ এই বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে এবং ক্যামেরাবন্দী করে। ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতীক দে নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মী ঠিক ওই জায়গাতেই (প্রাণীটির নিরাপত্তার স্বার্থে সঠিক জায়গাটির বর্ণনা দেওয়া হলোনা) প্রাণীটিকে প্রত্যক্ষ করেন এবং তিনিও প্রায় অন্ধকারের মধ্যেই ছবি তুলে রাখেন। পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, তারা ওই একই প্রাণীর ছবি তুলেছে। আমাকে ছাত্ররা ছবিটি দেখালে বুঝতে পারি, ওরা Indian Crested Porcupine (Hystrix Indica) বা ভারতীয় ঝুটিযুক্ত সজারু’র দর্শন পেয়েছে!”

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে সজারু’র দেখা মিলেছে (বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে ছবিটি সংগ্রহ করেছে বেঙ্গল পোস্ট):

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সবুজ ও নিরবিলি ক্যাম্পাসে এর দেখা পাওয়া কিছুটা বিরল ঘটনা হলেও, একেবারেই যে অস্বাভাবিক নয়; তা মানছেন বনদপ্তরের আধিকারিক থেকে শুরু করে মেদিনীপুর শহরের পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী গবেষকরা। তবে, এই মুহূর্তে সকলেই বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই প্রাণীটির সংরক্ষণ বা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন। যদিও, অধ্যাপক ড. মন্ডল জানান, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শুধু সবুজ ক্যাম্পাস-ই নয়, জঙ্গলমহলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহু প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কিছু বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর এক নিরাপদ আশ্রয়-ও বটে। এই ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। সজারু যেহেতু নিশাচর প্রাণী। তাই, রাতের বেলায় নিজেদের খাবারের সন্ধানে বের হয়। তবে, সেই সময়ে কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা যে একেবারে থাকেনা, তাও নয়!”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপকদের মতে, বিরল এই প্রানীটির আশু সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ, ২০০৮ সালে বিশ্বে প্রানী ও উদ্ভিদের সংরক্ষনের যে তালিকা বের হয়, তাতে এই প্রাণীটি রেড লিস্টেড তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আপাতত তাঁরা এই প্রাণীটির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্যোগী বলেও জানিয়েছেন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নেচার ক্লাব’ এর অন্যতম সদস্য অধ্যাপক অমল কুমার মন্ডল এও বলেন, “অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু উপাচার্য থাকাকালীন এই নেচার ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পাসকে কিভাবে আরও আরও সবুজ এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের সঠিক সংরক্ষণের উপযোগী করা যায়, সেই বিষয়ে কাজ করছে এই নেচার ক্লাব। ন্যাকের (NAAC) পরিদর্শণে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ সবুজ ক্যাম্পাস খুব প্রশংসিত হয়েছিল। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক প্রবিত্র কুমার চক্রবর্তী ও নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী-ও নিরলস ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন IQAC’র দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক মধুমঙ্গল পাল সহ অন্যান্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাও।” (Edited by Maniraj Ghosh, May-6, 9 pm)

thebengalpost.net
সজারু (ছবি গুগল থেকে সংগৃহীত):