দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ নভেম্বর: ‘দলমার দাঁতাল’ বা ‘দলমার দামাল’ হিসেবেই পরিচিত এরা। তবে, কবেই ভুলেছে দলমার (ওড়িশা রাজ্যের) সেই পথ। বর্তমানে, জঙ্গলমহলের স্থায়ী বাসিন্দা এই মত্ত মাতঙ্গের দল। সারা বছর ধরেই এদের দেখা মেলে, বলা ভালো দাপাদাপি চলে! তবে, কার্তিক-অগ্রাণের নবান্নের গন্ধ আর মাঘ-ফাগুনের সরিষা, আলু, মুলোর ক্ষেত এদের বেশি পছন্দ। ফলে শীতের শুরু থেকে বসন্তের শেষ অবধি জঙ্গল সংলগ্ন মাঠ, আর মাঠ সংলগ্ন গ্রামগুলোতে এই হস্তি দলের নিত্য আনাগোনা চলতেই থাকে। গত কয়েকদিন ধরে মেদিনীপুর বনবিভাগের অন্তর্গত মেদিনীপুর রেঞ্জ, চাঁদড়া রেঞ্জ এবং পিড়াকাটা রেঞ্জের বিভিন্ন জঙ্গলগুলিতে ঘোরাফেরা করছে ৪০-৫০ জনের একটি হস্তি দল। কিন্তু, শুধু কি আর জঙ্গলের লতাপাতায় মন ভরে, কচি ধানের গন্ধে মাতাল হয়ে মাঠজুড়ে দাপাদাপিও শুরু হয়েছে! বনদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ টি হাতি মেদিনীপুর রেঞ্জের গোপগড় বীটের অন্তর্গত নন্দগাড়ি, জামশোল, বাগডুবি প্রভৃতি এলাকায় অবস্থান করছে। যা জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে মাত্র ৪-৫ কিলোমিটারের মধ্যেই। ফলে, মাত্র ৮ মাস আগে (২৫ ফেব্রুয়ারি)’র ‘জেলা শহরে’ হাতি প্রবেশের ঘটনার পুনরাবৃত্তি’র আশঙ্কায় আছে বনদপ্তরও!
এদিকে, মেদিনীপুর গ্রামীণের বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে হাতির তান্ডব। সমান তালে চলছে হাতিকে উত্যক্ত করে আদিম উল্লাসে মেতে ওঠাও! এসবের মাঝেই কিছুটা অসহায় বোধ করছে যেন বনদপ্তর। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাঁরা নজর রাখছেন হাতির গতিবিধির দিকে, আর গ্রামবাসী ও হুলা পার্টির সহায়তার দিকে! আসলে, দলমার দামালরা তো খাদ্যের অভাবে সেই পথ ভুলেছে কবেই। পরিবেশপ্রেমী রাকেশ সিংহ দেব জানিয়েছেন, “দলমার দাঁতালরা সেই আশির দশক থেকে জঙ্গলমহলের অতিথি হিসেবে প্রবেশ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, একবার এদিকে আসার পর, আর ওই মুখো হয়নি গজরাজগণ! ফলে, জঙ্গলমহলের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া আর বাঁকুড়া জেলাতেই তাই স্থায়ী আস্তানা গেড়েছে এই দাঁতালরা।” মেদিনীপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত বনাঞ্চল আধিকারিক পাপন মোহান্ত জানিয়েছেন, “বেশিরভাগ হাতি এখন বাঁকুড়ার জঙ্গলেই আছে। বনদপ্তর চেষ্টা করছে এদেরকেও সেদিকেই পাঠাতে।”