দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, বাঁকুড়া, ৯ মার্চ: “আমি নারী, আমি মহীয়সী, আমার সুরে সুর বেঁধেছে জ্যোৎস্নাবীণায় নিদ্রাবিহীন শশী।” ‘কবিগুরু’-র এই স্মরণ-সুন্দর পংক্তিগুলিকেই যেন সার্থকতা দান করেছেন জঙ্গলমহল বাঁকুড়া জেলার খাতড়ার SDO নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় (IAS Neha Banerjee)। দক্ষ হাতে প্রশাসন সামলানোর সাথে সাথেই সুরের জাদুতে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur)-র এই প্রাক্তনী। আসলে শৈশব থেকেই মেধাবী ও সুকন্ঠী এই বঙ্গতনয়া “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে”-ই নিজের জীবনের গল্প লিখে চলেছেন। আর সেজন্যই আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) থেকে ক্যাম্পাসিংয়ে ভালো চাকরি পাওয়ার পরও, ‘সু-প্রশাসক’ হওয়ার লক্ষ্যে UPSC-র জন্য কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করছিলেন। তারপর একটা বছর চাকরি করতে করতেই নিরন্তর পড়াশোনা! কঠোর অধ্যাবসায়ের ফলও পেয়েছিলেন নেহা। প্রথমবারের চেষ্টাতেই UPSC-র সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ২০-তম স্থান (UPSC Exam) দখল! ২০১৯ সালে UPSC-তে এই নজিরবিহীন সাফল্যের পর, ট্রেনিং শেষে এখন বাঁকুড়ার খাতড়া-র SDO (মহকুমাশাসক) পদে রয়েছেন নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় (Neha Banerjee)।

thebengalpost.net
নেহা বন্দ্যোপাধ্যায়:

thebengalpost.net
Advertisement (বিজ্ঞাপন):

প্রসঙ্গত, নেহা যাদবপুরের বাসিন্দা। প্রথমে কারমেল গার্লস, তারপর সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা। তারপরে আইআইটি (IIT)-র প্রবেশিকা দিয়ে IIT খড়্গপুরে (IIT Kharagpur) শুরু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ। সেখানে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা। তারপর ক্যাম্পাসিং-এ চাকরি। সেই সূত্রেই যেতে হয়েছিল নয়ডায়। চাকরি করতে করতেই নেহা-র ভাবনায় আসে ‘কীভাবে সমাজের করা যায়’! এই প্রশ্নই বারবার তাঁর মনে ঘুরে ঘুরে আসতো। এত ভাল চাকরি, এত বড় সুযোগ, তারপরেও এমন ভাবনা কেন? নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি কখনও বিদেশে যেতে চাননি। তাঁর অনেক সহপাঠীই এখন বিদেশে থিতু হয়েছেন। কিন্তু, তাঁর ইচ্ছে ছিল দেশে থেকেই কিছু করার। সেই খোঁজেই চাকরি করতে করতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন UPSC দেওয়ার।

thebengalpost.net
নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় (Neha Banerjee):

উল্লেখ্য, শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী নেহা । তা সত্ত্বেও, চাকরি করতে করতে এত বড় পরীক্ষার প্রস্তুতি (UPSC Preparation) নেওয়া, ভীষণ কঠিন কাজ। কীভাবে করলেন? IAS নেহা ব্যানার্জী জানান, প্রতিদিন সকালে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন তিনি। অফিস যাওয়ার আগে ওই সময়টা তিনি রোজ পড়াশোনা করতেন। সপ্তাহে যে ২ দিন (শনিবার ও রবিবার) ছুটি থাকত, সেই দিনগুলি নাগাড়ে চলত পড়াশোনা। এক একদিন অন্তত ১২-১৩ ঘণ্টা করে প্রস্তুতি। তাছাড়াও ব্যবহার করতেন অফিসে যাতায়াতের সময়টাও। প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে তিনি এও জানান, পড়াশোনার অনেকটা তিনি ডিজিটাল মাধ্যমেই (Digital Mode) সেরেছেন। মোবাইলে খবরের কাগজ পড়া থেকে বিভিন্ন বই পড়া- ক্লাস করা- সবই ছিল ডিজিটাল মাধ্যমে। তিনি জানিয়েছেন, “মোবাইলেও পড়াশোনা করতাম। খবর, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তাম। কিছু কিছু নোট মোবাইলে নিয়ে যেতাম। অফিস যেতে যেতে, অফিসের লাঞ্চ টাইমে পড়তাম। তবে, সোশ্যাল মিডিয়া ওই সময় সম্পূর্ণ ত্যাগ করেছিলাম!” শুধু পড়শোনা নয়, সঙ্গীত-অন্ত-প্রাণ নেহা গানের রেওয়াজও চালিয়ে যেতেন সময় পেলেই। সম্প্রতি, বিষ্ণুপুর মেলার মঞ্চে সুরের জাদুতে SDO নেহা বন্দ্যোপাধ্যায় মুগ্ধ করেছেন বাঁকুড়াবাসীকে। রূপে-গুণে-দক্ষতায় এমন ‘অনন্যা’ মহকুমাশাসককে পেয়ে গর্বিত জঙ্গলমহল খাতড়ার বাসিন্দারা!

thebengalpost.net
বাঁকুড়ার জেলাশাসকের সঙ্গে খাতড়ার মহকুমাশাসক নেহা ব্যানার্জী: