মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ সেপ্টেম্বর: “পাগলিটাও মা হয়েছে, বাবা হয়নি কেউ!” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের এক অনন্য উদ্যোগ ‘পালনা’। প্রয়োজন নেই ভ্রূণ-হত্যা কিংবা সদ্যোজাত সন্তানকে ঝোপে-ঝাড়ে ফেলে দেওয়ার! ‘পরিচয়’ বা ‘স্বীকৃতি’ হীন সন্তানকে পালন করবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। শুধু ‘গোপনে’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৪টি হাসপাতালে রাখা জেলা প্রশাসনের ‘পালনা’-তে সদ্যোজাত সন্তান বা নবজাতককে রেখে আসতে হবে। বৃহস্পতিবার সেই ‘পালনা’-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী। ছিলেন জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরাও।
মূলত, ভ্রূণ-হত্যা কিংবা সদ্যোজাতদের ‘অসহায়-মৃত্যু’ রুখতেই জেলা প্রশাসনের এই অনন্য উদ্যোগ বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, ‘একাধিক’ সামাজিক কারণে অথবা আর্থিক টানাপড়েনের কারণে অনেক সময়ই গর্ভে আসা সন্তানকে ‘পৃথিবীর আলো’ দেখাতে কিংবা নিজেদের পরিচয়ে বড় করতে চান না প্রসূতি মা কিংবা দম্পতি। সেক্ষেত্রে অনেক সময়ই জন্মের ঠিক আগে ভ্রুণ হত্যা করা হয় কিংবা সদ্যোজাত সন্তানকে ঝোপে-ঝাড়ে, পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। অসহায়ভাবে মৃত্যু হয় নবজাতকের। দৈবাৎ বেঁচে গেলেও তার লালন-পালন ঘিরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের ‘পালনা’ সে ক্ষেত্রেই হয়ে উঠতে পারে মুশকিল-আসান! শিশু সুরক্ষা দপ্তরের সহায়তায় তৈরি জেলা প্রশাসনের এই ‘পালনা’ লোহার তৈরি দরজাওয়ালা একটি কক্ষ বিশেষ। ‘পালন’ আর ‘দোলনা’- শব্দ দু’টির সমন্বয়ে সম্ভবত এই ‘পালনা’ নামটি তৈরি করা হয়েছে।
জেলার ৪টি হাসপাতাল, যথাক্রমে- মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, ঘাটাল মহকুমা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল ও চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের সামনে রাখা থাকবে ‘পালনা’। পালনা-র শয্যাতে শিশু-কে শুইয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই, সেনসরের মাধ্যমে সংকেত পৌঁছে যাবে হাসপাতালে চিকিৎসক বা নার্সদের কাছে। তাঁরা শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। পরে জেলা প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন বা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের সহায়তায় শিশুটিকে সরকারি হোম বা অনাথ আশ্রমে পাঠানো হবে কিংবা আইন মেনে অন্য কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। ‘পালনা’-তে সদ্যোজাতকে রাখার সময় কোনভাবেই যাতে শিশুর মা-বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ্যে না আসে, সেই বিষয়টিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের তরফে সুনিশ্চিত করা হবে বলেও এদিন জানিয়েছেন জেলাশাসক। অপরদিকে, এই ‘পালনা’-র ভেতর থেকে যাতে কোনোভাবে শিশু-চুরি না হয়, তাও প্রশাসনের তরফে নিশ্চিত করা হবে বলে সূত্রের খবর।