দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ মে: অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসক রবার্ট ডগলাসকে হত্যা করে (১৯৩২ এর ৩০ এপ্রিল) ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছিলেন (১৯৩৩ এর ১২ জানুয়ারি) মেদিনীপুরের ‘অগ্নিকিশোর’ শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য। স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান মেদিনীপুর শহরের ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজের এই বীর ছাত্রের স্মৃতিতে তাঁর নামাঙ্কিত ‘প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন’ প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন হয় ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর। যে জেলা পরিষদ চত্বরে প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্য এবং প্রভাংশু শেখর পালের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ব্রিটিশ শাসিত মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস, সেই জেলা পরিষদ চত্বরেই এই প্রেক্ষাগৃহের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। পরে অবশ্য এই প্রেক্ষাগৃহের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বর্তমানে, শুধু মেদিনীপুর শহর নয়, সারা জেলার একমাত্র উন্নত ও আধুনিক পরিষেবা বিশিষ্ট এই প্রেক্ষাগৃহেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা- প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি (১৭ মে), জেলার প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং-ও এই প্রেক্ষাগৃহেই অনুষ্ঠিত হলো। আর, সেখানেই মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া মেদিনীপুর শহরের জন্য একটি ‘সিনেমা হল’ চেয়ে বসেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে! আর, তখনই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই হলটাকেই তো আমরা প্রজেক্টর বসিয়ে সিনেমা হল বানিয়ে দিতে পারি।” হঠাৎ উঠে উঠে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাবে, সেই সময় অবশ্য বাকিরাও সম্মতি দেন! তবে, এই সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি মেদিনীপুর শহরের আপামর লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যেই, তাঁরা প্রতিবাদ সংঘটিত করছেন বিভিন্নভাবে।

thebengalpost.net
প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদন:

মেদিনীপুরবাসী বলছেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরের (অধুনা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের) ‘বীর বিপ্লবী’ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের নামাঙ্কিত এই প্রেক্ষাগৃহ জেলা তথা শহরের গর্ব। সর্বোপরি, আধুনিক ও সুবৃহৎ (প্রায় ৭০০ আসন বিশিষ্ট) এই প্রেক্ষাগৃহের ভাড়া আকাশ ছোঁয়া হলেও, জেলা ও‌‌ শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও জমকালো সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই প্রেক্ষাগৃহেই আয়োজিত হয়। সেক্ষেত্রে, এই তা সিনেমা হলে রূপান্তরিত হলে সেই সকল অনুষ্ঠান কোথায় আয়োজিত হবে? এই ভবনের বিকল্প একটিও প্রেক্ষাগৃহ শহর তো দূরের কথা, জেলাতেও নেই! তাই তাঁরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। যদিও, এই প্রস্তাব এখনো সরকারিভাবে অনুমোদিত হয়নি, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেকেই জানাচ্ছেন, সপ্তাহে দু’দিন এখানে সিনেমা চলতে পারে। কিংবা, মাঝেমধ্যে চলচ্চিত্র উৎসব তো হতে পারে! তবে, তাও মেনে নিতে রাজি নন শহরবাসী। শিল্পী অভিনন্দন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “মাঝেমধ্যে বা সপ্তাহে হলেও, এই সর্বাঙ্গীন সুন্দর প্রেক্ষাগৃহের ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া, বিভিন্ন সময়ে (বিশেষত, শীত কালে) দেখা যায়, পুরো সপ্তাহ জুড়েই এই প্রেক্ষাগৃহে কোনো না কোনো অনুষ্ঠান থাকে, সেক্ষেত্রে আয়োজকরা সমস্যায় পড়তে পারেন।” শহরের শিক্ষক মণিকাঞ্চন রায়, সুদীপ কুমার খাঁড়া থেকে শিল্পী শুভদীপ বসু, চিত্রগ্রাহক আজহারুল পাঠান প্রমুখদের মুখেও এক কথা। এই প্রেক্ষাগৃহ-কে তাঁরা ‘সিনেমা হল’ হিসেবে মেনে নিতে রাজি নন। তাঁদের মতে, “বিধায়ক জুন মালিয়ার প্রস্তাবে শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী যেমনটা বলেছিলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি দেওয়া হবে, বেসরকারি কোন সংস্থা বা মালিক যদি সিনেমা হল তৈরি করতে চান, তবে তৈরি করতে পারেন’- এটাই আমরাও চাইছি। সিনেমা হল হোক অন্যত্র।”

thebengalpost.net
প্রেক্ষাগৃহ:

উল্লেখ্য যে, এই মুহূর্তে জেলাশহর মেদিনীপুরের মাত্র একটিই সিনেমা হল রয়েছে।‌ সেটাও আবার মূল‌ শহরের উপকণ্ঠে বল্লভপুর এলাকায়। তাই, অনেকেই খড়্গপুরে যান সিনেমা দেখতে। এদিকে, মেদিনীপুর শহর শপিং মলে‌ ভরে গেলেও, দ্বিতীয় কোনো সিনেমা হল বা মাল্টিপ্লেক্স নেই! তাই, মহুয়া বা অরোরা সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই, শহরবাসীর এই দাবি (ভালো কোনো সিনেমা হলের) দীর্ঘদিনের। তবে, সেজন্য তাঁর শহরের গর্বের প্রেক্ষাগৃহ-কে বিসর্জন দিতে চান না! এদিকে, শনিবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে এই বিষয়ক প্রশ্নে সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা জানি, এই প্রস্তাব মেদিনীপুর শহরবাসী কখনোই মেনে নিতে পারবেন না! আমরাও তাঁদের সঙ্গে সহমত। অন্যত্র হোক সিনেমা হল।” এদিকে, এই বিষয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন, “এটা এখনও প্রস্তাব আকারে আছে।‌ প্রেক্ষাগৃহ থাকবে। তবে, সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন সিনেমা দেখানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল। শহরবাসীর কথা ভেবেই একটি ভালো সিনেমা হলের আবেদন জানিয়েছিলেন বিধায়ক। সেক্ষেত্রে শহরবাসীর সেন্টিমেন্ট বা প্রস্তাব ছাড়া কিছু করা হবেনা!”

thebengalpost.net
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভার দিন :