দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ নভেম্বর: গঙ্গার উপর দিয়ে, থুড়ি বাগালপাড়ার উপর দিয়ে এই ক’দিনে অনেক ‘জল’ (পড়ুন, ঘটনা) বয়ে গেছে! অশিক্ষায়, অজ্ঞানতায়, অসচেতনতায় ডুবে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের এই গ্রামের ‘অন্ধকার দশা’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে জনসমক্ষে চলে আসে! ফুটে ওঠে, আধুনিক সভ্যতা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতোই যেন কোনোক্রমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সবংয়ের দাঁড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খেড়িয়া শবর অধ্যুষিত এই বাগালপাড়া গ্রাম। অবাধ মদ্যপান, চূড়ান্ত অভাব-অনটন, অশিক্ষা-অপুষ্টি আর বাল্যবিবাহের নির্মম চিত্র নাড়িয়ে দেয় গোটা রাজ্যকেই। নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। হতভম্ব হয়ে যান এলাকার ‘ভূমিপুত্র’ বিধায়ক তথা রাজ্যের দু’দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়াও। বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে পৌঁছে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিডিও সহ ব্লক প্রশাসনকে। তাঁরা সরজমিনে খতিয়ে দেখেন পরিস্থিতি। বিডিও তুহিন শুভ্র মোহান্তি পরোক্ষে স্বীকার করেন, এ গ্রামের প্রকৃত পরিস্থিতি তাঁদের কিছুটা অগোচরেই থেকে গিয়েছিল! সূত্রের খবর অনুযায়ী, স্থানীয় নেতৃত্ব ও স্থানীয় প্রশাসনের উপর চরম ক্ষুব্ধ হন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই বিডিও এবং থানার ওসি-কে নির্দেশ দেন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে এবং বিশেষ কমিটি গড়ে এই গ্রামের হাল ফেরানোর বিষয়ে তৎপর হতে। যে দুই শিক্ষক ও সমাজকর্মীর প্রচেষ্টায় এই গ্রামে একটু একটু করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ‘আলো’ প্রবেশ করতে শুরু করেছিল, সেই শান্তনু অধিকারী ও ভাস্কর ব্রত পতি-কেও ডেকে পাঠানো হয়। নেওয়া হয় তাঁদের পরামর্শও।

thebengalpost.net
বৃহস্পতিবার গ্রামে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিডিও সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা :

শুক্রবার সকালে, সবার প্রথমে ওসি সুব্রত বিশ্বাসের নির্দেশে ওই গ্রাম এবং আশেপাশের সমস্ত চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দেওয়া হয়। গ্রামে যাতে ভবিষ্যতে কোনো চোলাইয়ের ঠেক গড়ে না ওঠে সেজন্য স্থায়ী নজরদারির ব্যবস্থা হয়। গ্রামের বাসিন্দাদের আধার কার্ড, জাতিগত শংসাপত্র তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়াও, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি বিষয়গুলি দেখার জন্য এবং গ্রামে সচেতনতামূলক বার্তা ধারাবাহিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, মন্ত্রী তথা বিধায়ক মানস রঞ্জন ভূঁইয়া’র নির্দেশে এবং বিডিও তুহিন শুভ্র মোহান্তি’র নেতৃত্বে গড়ে দেওয়া হয় কমিটি। কমিটিতে রাখা হয়, সবং এলাকারই বাসিন্দা শিক্ষক ও সমাজকর্মী শান্তনু অধিকারী’কেও। প্রসঙ্গত, এই শান্তনু অধিকারী এবং তমলুকের ভাস্কর ব্রত পতি’র উদ্যোগেই এই গ্রামে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে উঠেছিল ‘বর্ণপরিচয়’ পাঠশালা। স্বভাবতই, অভিজ্ঞ মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া উপলব্ধি করেন, এই কমিটিতে ‘বর্ণপরিচয়’ এর প্রতিনিধিদেরও রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে, এই মুহূর্ত থেকে নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। কার দোষে হয়েছে, কতটুকু আছে, কতটুকু নেই, কেন নেই, এসব আর ভেবে লাভ নেই। কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে, শনিবার থেকেই সেই কমিটি বাগালপাড়ার উন্নয়নের জন্য আন্তরিক ভাবে কাজ করবে। এই গ্রামের হাল ফেরাতেই হবে।” এই ক’দিনে তাঁদের উপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেলেও, সমাজমাধ্যমে নানা প্রশংসা এবং নানা ‘কুকথা’ শুনতে হলেও, শেষ পর্যন্ত যে মন্ত্রীমশাইয়ের উদ্যোগে ‘আলো’ ফিরতে চলেছে বাগালপাড়া গ্রামে, তাতেই খুশি ‘বর্ণপরিচয়’ এর দুই প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক শান্তনু অধিকারী এবং শিক্ষক ভাস্কর ব্রত পতি।

thebengalpost.net
উদ্যোগী হলেন স্বয়ং মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভূঁইয়া :