দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর: দিনকয়েক আগেই শালবনীর বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা ও উপভোক্তা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ‘ভাইরাল’ হওয়া ভিডিও ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। যেখানে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো-কে বলতে শোনা গিয়েছিল, “জুন মালিয়া সায়নী সায়ন্তিকা মিমি নুসরতরা….সব লুটেপুটে খাচ্ছে। তার পরেও যদি তারা দলের সম্পদ হয়, তাহলে তো আর পার্টি করা যাবেনা!” এরপরই, শ্রীকান্ত’র বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় দল। করা হয় শোকজ। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া-কে ফোন করে ক্ষমা চাইতে বলেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, অন-ক্যামেরা বা দলের অভ্যন্তরে দুঃখপ্রকাশ করলেও, আলাদা করে জুনকে নাকি ফোন করেননি শ্রীকান্ত! মঙ্গলবার খড়্গপুর শিল্পতালুকে দুই মেদিনীপুরের জন প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি দু’জনকে মিলিয়ে দেন। এই সভা বা বৈঠকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর ও পিংলা’র বিধায়ক অজিত মাইতি বৈঠক শেষে বলেন, “দু’জনকে উনি মিলিয়ে দিলেন। হ্যান্ডশেক করতে বললেন দু’জনকে। বড় দিদির মতো দাঁড়িয়ে থেকে দু’জনের হাত মিলিয়ে দিলেন। এই হচ্ছেন আমাদের দিদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদি বললেন, জুন খুব ভালো মেয়ে। পুরো প্রটেকশন দেবে। আমিও বললাম খুব-ই ভালো!” এছাড়াও অজিত বলেন, “পুজোর আগে বৈঠক, তাই দিদি আমাদের নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গান শোনালেন। রীতিমতো উৎসবের মেজাজে বৈঠক হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সমস্ত বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্য, চেয়ারম্যানদের কাছে পড়ে থাকা কাজকর্ম নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন। মেদিনীপুরের চেয়ারম্যানের কাছেও জানতে চেয়েছেন। জুনকে বলেছেন, কাজকর্ম গুলো দেখেশুনে দিদির কাছে ফাইল পাঠিয়ে দিতে।”
অপরদিকে, হাতির হানায় মৃত সব পরিবারের সদস্যরাই কাজ পেয়েছেন শুনে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত হয়েছেন বলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর, বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজিত মাইতি জানিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই আছে মতভেদ! জঙ্গলমহলের অনেক নেতা-কর্মীরাই জানিয়েছেন, “সব পরিবার তো দূরের কথা, বেশির ভাগ পরিবার-ই এখনও কাজ পায়নি!” এদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে মৃত তৃণমূল কর্মী জগদীশ দাশের ছেলের জন্য কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন বলেও এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন অজিত মাইতি। অন্যদিকে, সর্বসম্মতিক্রমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচন (মনোনয়ন) করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক-কেই তিনি সভাধিপতি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যদিও, জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ার দৌঁড়ে ছিলেন আরও দু’জন। তমলুক জেলা পরিষদের সদস্য তথা মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা এবং ময়নার জেলা পরিষদের সদস্য তথা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শাহজাহান আলি-ও দৌড়ে ছিলেন বলে সূত্রের খবর। শেষ পর্যন্ত, পশ্চিম মেদিনীপুরের (উত্তরা সিংহ হাজরা) মতোই একজন ‘বিধায়ক’ ই পূর্ব মেদিনীপুরেও সভাধিপতি হলেন! তবে, সকলেই তাঁদের প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন বলেই জানা গেছে। উত্তম বারিক জানিয়েছেন, “নেত্রীর নির্দেশে মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করব। কেন্দ্রের টাকার প্রয়োজন নেই। সঠিক পথে, আইন মেনে কাজ করব। বাংলার বাড়ি এবং গ্রামীণ রাস্তার উপর জোর দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো কাজ করব।” উল্লেখ্য যে, এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের ৫৬ জন জেলা পরিষদ সদস্যের মধ্যে ৮ জন অনুপস্থিত ছিলেন। এনিয়ে উত্তম জানিয়েছেন, “ওঁরা অসুস্থ ছিলেন বলে আসতে পারেননি।”