তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ এপ্রিল:পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘অদ্ভুত’ এক অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। খাতায়-কলমে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, অথচ সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের আজব পরিস্থিতি। পাড়ার একটি ভাঙাচোরা মাটির ক্লাব ঘর। তাও বন্যায় ভেঙে পড়েছে। কাঁচা মাটির বাড়ি ধসে বেরিয়ে গিয়েছে বাঁশ। বাঁশ দিয়ে ত্রিপল খাটিয়ে চলছে রান্নার কাজ। তার উপর ৬ বছর ধরে সহয়ায়িকার কাজ করেও মেলেনি বেতন। জন্মলগ্ন থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্ব সামলে আসা ওই অস্থায়ী সহায়িকা স্থায়ী নিয়োগের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে। চাইছেন বেতন। নির্বিকার প্রশাসন মিনা-কে কিছুই দিতে পারেনি! জানা যায়, এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র শুরুর সময় কর্মী না থাকায়, তৎকালিন সময় থেকে অস্থায়ী ভাবে সহায়িকা হিসাবে ৬ বছর কাজ করে চলেছেন মিনা মাইতি। তবে, ৬ বছর কাজ করেও মেলেনি কোন টাকা। চাকরিও স্থায়ী হয়নি। এই গাফিলতি কার, উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন!

thebengalpost.net
মিনা মাইতি:

ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহপুর পূর্বপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের। নিয়ম অনুযায়ী, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষিকা ও একজন সহায়িকা থাকবেন। শিক্ষিকা বাচ্চাদের পড়াশোনা, খাতাপত্র দেখভাল করবেন। আর সহায়িকা বাচ্চাদের খাবার, গর্ভবতী মায়েদের খাবার রান্না করে পরিবেশন করবেন। আর, সেই কেন্দ্রের জন্মলগ্ন থেকেই কাজ করে আসছেন গ্রামেরই মিনা মাইতি। এও জানা গেছে যে, ২০১৬ সালে যখন ওই এলাকায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু হয়, সেই সময় গ্রামের মানুষ ঠিক করেন যে, মিনা দেবী অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রর সহায়িকা হিসেবে কাজ করবেন। সেই মোতাবেক ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র সমস্ত সরকারি নিয়ম কানুন মেনে চালু হয়। এমনকি দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কোন শিক্ষিকা নিযুক্ত না হওয়ায়, মিনা মাইতি একা হাতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না ও বাচ্চাদের পড়াশোনার দায়িত্বও সামলেছিলেন। আর সেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দীর্ঘ ৬ বছর চাকরি করেও মেলেনি বেতন।

thebengalpost.net
আজব অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র:

অসহায় মিনা মাইতির দাবি, “২০১৬ সাল থেকে চাকরি করার পর ১৮/১২/২০১৮ তারিখে গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল অফিস অফ দ্যা চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট অফিস, ঘাটাল আইসিডিএস, প্রজেক্টের লিখিত পরীক্ষা দিয়েও সরকারিভাবে নিয়োগ হয়নি।” প্রায় ছয় বছর ধরে এই ভাবে তিনি প্রতিদিন কাজ করে আসছেন। এলাকাবাসী ও তৎকালীন এলাকার শাসক দলের নেতাকর্মীদের কথায় দীর্ঘদিন ধরে সমস্ত প্রশাসনিক দপ্তরে তিনি এই বিষয়ে লিখিত আবেদন জানান। কিন্তু, কাজের কাজ কিছু হয়নি। শুধু বেতনই নয়, ভাঙাচোরা অবহেলায় পড়ে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেরও হাল ফেরেনি! যদিও এ বিষয়ে ঘাটাল আইসিডিএস কেন্দ্রের সিডিপিওর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি। ঘাটাল পৌরসভার চেয়ারম্যান তুহিন কান্তি বেরার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সমস্ত গাফিলতির দায়ভার সিডিপিওর উপরেই চাপিয়েছেন। এমনকি তিনি জানিয়েছেন, ওই সহায়িকার জন্যই আইসিডিএস কেন্দ্রটি টিকে রয়েছে। অপরদিকে, মিনা মাইতি ও তাঁর পরিবার থেকে শুরু করে এলাকাবাসী এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষিকা সকলেই চান, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্মলগ্ন থেকে যে মহিলার জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি গ্রামে টিকে রয়েছে, প্রশাসন সেই মহিলাকে স্থায়ীভাবে সহায়িকা পদের নিয়োগ পত্র দিক। তুলে দিক বেতন।