দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ এপ্রিল:সরকারি নির্দেশিকা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ভাবে, এই গরমের মধ্যেও একইদিনে তিনটি পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে জেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিষয়টি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) নজরে আসতেই, কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই। এই বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওই সমস্ত স্কুলের নাম চেয়ে পাঠিয়েছেন এস.আই (School Inspector) বা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রচন্ড দাবদাহের কারণে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে গরমের ছুটি এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন গত বুধবার (২৭ এপ্রিল)। তাঁর আবেদন বা পরামর্শ মেনে, রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর ওই দিন সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্যের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে ২ মে থেকে ১৫ জুন অবধি গরমের ছুটি (Summer Vacation) থাকবে। তারপরই, গত ২৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (West Bengal Board of Primary Education) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছিল, ২ মে থেকে গরমের ছুটি পড়েছে। তাই, ২ মে থেকে প্রথম পার্বিক মূল্যায়ন নেওয়ার কথা থাকলেও, আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরবর্তী পরীক্ষা সূচি পরে জানিয়ে দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই, পশ্চিম মেদিনীপুর DPSC’র তরফেও বৃহস্পতিবার একই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ২ মে থেকে ১৫ মে অবধি প্রথম পার্বিক মূল্যায়ন (First Term Evaluation) নেওয়ার কথা থাকলেও, আপাতত তা বাতিল করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই পরবর্তিত পরীক্ষাসূচি জানিয়ে দেওয়ার কথাও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিলেন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই। কিন্তু, সেই বিজ্ঞপ্তি বা নির্দেশিকা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে জেলার কয়েকটি স্কুল গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার পরীক্ষা নিয়ে নেয়। এমনকি, একইদিনে তিনটি পরীক্ষা নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই গরমের মধ্যে যা শিশুদের উপর এক প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বলেই মনে করছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন।
তবে, বিষয়টি তাঁর নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি কড়া নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, যেসমস্ত বিদ্যালয় এই কাজ করেছে, তা সম্পূর্ণভাবে সরকারি নির্দেশিকার বিরোধিতা বলেই সংসদ মনে করছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উপযুক্ত তথ্য সমেত বিষয়টির তদন্ত করার জন্য। শনিবার এই বিষয়ে চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই জানিয়েছেন, “সরকারিভাবে নির্দেশ জারি করার পরেও, তড়িঘড়ি পরীক্ষা নিয়ে আসলে সরকারি নির্দেশিকার অবমাননা করেছে ওই সমস্ত স্কুল। তাছাড়াও, প্রাথমিকের পড়ুয়াদের একই দিনে তিনটে পরীক্ষা নেওয়া রীতিমতো অবৈজ্ঞানিক কাজ। এই গরমের মধ্যে শিশুদের এভাবে কষ্ট দিও ওই সমস্ত স্কুলের শিক্ষকরা অন্যায় করেছেন বলেই মনে করছি। তাই, বিষয়টি আমার নজরে আসার সাথে সাথেই, পদক্ষেপ নিয়েছি। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলেছি। তারপর, সেই রিপোর্ট আমরা রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দেবো।” তবে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিজ্ঞপ্তি জারি করার পর, শনিবার অবশ্য ওই স্কুলগুলি অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলি নেওয়ার সাহস দেখায়নি!