দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ এপ্রিল:রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলে গেছেন, “টাকা মাটি, মাটি টাকা!” কলি যুগেও তা সর্বাংশে সত্য। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে টাকা-পয়সার কোনো মূল্যই নেই, আবার সবকিছুর মূলেই সেই টাকা-পয়সা! অন্যদিকে, ‘মাটি’তেই যে লুকিয়ে কোটি কোটি টাকা, তাও বা অস্বীকার করা যায় কি করে! একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলে, সরকারের পূর্ত দফতর (PWD)- এর ক্ষেত্রেও নাকি পরমহংসদেবের এই আপ্তবাক্য খানি একশো শতাংশ খাঁটি। মাটি বা রাস্তাতেই লুকিয়ে অর্থের ভান্ডার। আর, অর্থ ছাড়া তো এখন সবই অনর্থ! তাই, লড়াই অবশ্যম্ভাবী। মেদিনীপুর-খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন সহ বোর্ড গঠন ও শপথগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন হয়ে গেছে গত ১৬ মার্চ। তরপর কেটে গেছে প্রায় ১৯ দিন। এখনও ঘোষণা হয়নি, পুর পারিষদ বা CIC (Chairman in Council)-দের নাম। উৎকণ্ঠায় আছেন, দুই পৌরসভার ৩৬ জন কাউন্সিলর (চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান- ৪ জন ছাড়া)। তবে, সবথেকে আকাঙ্ক্ষিত হলো লোভনীয় পূর্ত পুর পারিষদ বা CIC PWD পদটি! এদিকে, চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিয়ে যেমন তীব্র ‘দড়ি টানাটানি’ অব্যাহত ছিল শেষ দিন পর্যন্ত, ঠিক তেমনই দুই পৌরসভার ৮-টি (খড়্গপুর ৫, মেদিনীপুর ৩) সিআইসি পদ নিয়েও রয়েছে লড়াই, চাপা উত্তেজনা। এই সময়ের মধ্যে আবার কংসাবতী নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। স্বভাবতই, অপেক্ষা করছে নানা চমক!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানের সঙ্গে দলের নবনির্বাচিত কয়েকজন কাউন্সিলর (ফাইল ফটো, নিজস্ব) :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর পৌরসভায় আছে ৩-টি সিআইসি পদ। চেয়ারম্যানের অধীনে তাঁরা কাজ করবেন। জল, জঞ্জাল এবং পূর্ত (PWD) এই তিনটি সিআইসি পদের জন্য বেছে নেওয়া হবে ৩ জন কাউন্সিলর-কে। এক্ষেত্রেও, আছে রাজনৈতিক লড়াই। মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যান সৌমেন খান-ই মূলত ৩-জনকে বেছে নেবেন। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে তাঁরা নাকি ৩-টি পদের জন্য ২ জনকে স্থির করে ফেলেছেন। আর, ‘পূর্ত’ হাতছাড়া করতে নারাজ স্বয়ং চেয়ারম্যান। সেক্ষেত্রে, তিনি নিজেই ওই দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। জলের জন্য নাকি ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালী ব্যানার্জি-কে ভেবে রেখেছেন জুন, সৌমেন। আর, জঞ্জালের জন্য ১৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুসময় মুখার্জি-ই নাকি প্রথম পছন্দ। এছাড়াও, ২-টি ‘ইনচার্জ’ পদ (আলো এবং স্বাস্থ্য) সহ ২-টি সিআইসি’র দৌড়ে আছেন ড. চন্দ্রানী দাস (২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর), সৌরভ বসু (৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর), মৌ রায় (৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর) প্রমুখরাও। অন্যদিকে, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ- দের আবার নাকি পূর্তের জন্য পছন্দ ছিল শহর সভাপতি তথা ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পান্ডব-কে। জল ও জঞ্জালের ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দ ছিল যথাক্রমে- মৌ রায় ও টোটোন সাসপিল্লি (১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর)। যদিও, মেদিনীপুর পৌরসভার ক্ষেত্রে নাকি জুন, সৌমেন-দের পছন্দই গুরুত্ব পাবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে।

thebengalpost.net
খড়্গপুরের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি :

অন্যদিকে, খড়্গপুর পৌরসভায় আবার ৫-টি সিআইসি পদ (জল, জঞ্জাল বা সাফাই, পূর্ত, কর, সংরক্ষণ) ১৮ জন (চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার ও ভাইস চেয়ারম্যান তৈমুর আলি খান ছাড়া) কাউন্সিলর এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে এই ৫-টি পদ নিয়ে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, খড়্গপুর পৌরসভার ক্ষেত্রে আবার সুজয়, দীনেন, প্রদ্যোৎ, প্রদীপ-দের পছন্দই নাকি গুরুত্ব পাচ্ছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। সেক্ষেত্রে, সম্ভাব্য ৫ জন সিআইসি হতে পারেন- অপূর্ব ঘোষ (৩৪ নং ওয়ার্ড), কল্যানী ঘোষ (৭ নং ওয়ার্ড), চন্দন সিংহ (২৯ নং ওয়ার্ড), জয়শ্রী পাল (৮ নং ওয়ার্ড) এবং এ. পূজা নাইডু (১৮ নং ওয়ার্ড)। উল্লেখ্য যে, অপূর্ব, কল্যানী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের লড়াইতেও ছিলেন। তাই তাঁদের সিআইসি পদ দেওয়া হবেই বলে সূত্রের খবর। এ.পূজা আবার খড়্গপুরের তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, জয়শ্রী পাল শহর সভাপতি দিব্যেন্দু পালের স্ত্রী এবং দু’বারের কাউন্সিলর। চন্দন সিংহ-ও দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। তাছাড়াও, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং প্রদীপ সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে, লড়াই ছেড়ে দিতে রাজি নয়, দেবাশীষ চৌধুরী (মুনমুন), রবিশঙ্কর পান্ডে-রাও। বিশেষত, সিআইসি- ‘পূর্ত’ এর জন্য নিজের স্ত্রী মিতালী চৌধুরী (১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর)-কে চাইছেন দেবাশীষ। তবে, পূর্ত পদটি অভিজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। লড়াইয়ে নাকি আছেন ৯ নং ওয়ার্ডের তরুণ কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ-ও। প্রার্থী হিসেবে তিনি ছিলেন জেলা নেতৃত্ব তথা জেলা সভাপতি’র চমক! আবার, যেভাবে তিনি দীর্ঘদিনের বাম গড়ে জোড়া ফুল ফুটিয়েছেন, তাতে বেজায় খুশি জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তাই, প্রবীর-ও যদি সিআইসি’র একটি পদ পেয়ে যান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! এদিকে, খুব তাড়াতাড়ি সিআইসি পদের জন্য নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দুই পৌরসভার চেয়ারম্যান যথাক্রমে সৌমেন খান, প্রদীপ সরকাররা। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “রাজ্য থেকে নির্দেশ এলেই নাম ঘোষণা করে দেওয়া হবে।” আপাততো সেদিকেই তাকিয়ে জেলা শহর ও রেল শহরের বাসিন্দারা।

thebengalpost.net
দলের জেলা সভাপতির সঙ্গে খড়্গপুর পৌরসভার ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চন্দন‌ সিংহ :

thebengalpost.net
খড়্গপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর ঘোষ :