দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর: চতুর্থীর সন্ধ্যায় (২৯ সেপ্টেম্বর) বদলির বিজ্ঞপ্তি জারি! বদলির তালিকায় একাধিক নাম-ও নেই। শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরের ডি.আই (District Inspector- Primary School) বা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক)-কে পাঠানো হয়েছে শিলিগুড়িতে; আর তাঁর জায়গায় শিলিগুড়ির ডি.আই আসছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। আর, সেজন্যই বিভিন্ন মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে! জেলার একাধিক শিক্ষক সংগঠন সহ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ডিপিএসসি (DPSC) চেয়ারম্যানদের একাংশ স্পষ্ট জানাচ্ছেন, “স্বজনপোষণ, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া সহ একাধিক অভিযোগ ছিল ওনার বিরুদ্ধে। অভিযোগ গিয়েছিল ওপর মহলেও। সেজন্যই, পুজোর মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে!” যদিও, একাংশ মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, “নেহাতই রুটিন বদলি। আর, চাকরি জীবনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের তো বিভিন্ন জায়গাতেই যেতে হয়!” ফোন করা হয়েছিল ডি.আই তরুণ সরকার’কেও। তবে, সাড়া দেননি তিনি!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডি.আই (প্রাথমিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সাথে সাথে, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের (DPSC) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বও ছিল তরুণ সরকারের ঘাড়ে। গত তিন মাস ধরে (২৪ জুন থেকে) এই দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। তবে, এটা ছিল তাঁর দ্বিতীয় দফার দায়িত্ব। এর আগে, ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি একটানা প্রায় দেড়-দু’ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন কৃষ্ণেন্দু বিষই। কৃষ্ণেন্দু বিষই ২৪ জুন (২০২২) পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তরুণ বাবু এই জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) হিসেবেও বেশ কয়েক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেজন্যই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উপর তাঁর ভালোই প্রভাব ছিল বলে একাংশ আধিকারিক ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন। এর মধ্যেই, গত ১ আগস্ট (২০২২) নিজের ভগিনীপতিকে অনৈতিক ভাবে ‘প্রমোশন’ দিয়ে ডিপিএসসি’র প্রধান সহায়ক (বড়বাবু) পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে! যোগ্যদের বঞ্চিত করে তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে, সেই সময় বিক্ষোভ ও আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন ডিপিএসসি’র একাধিক বর্ষীয়ান কর্মী। দলমত নির্বিশেষে ঐক্যমঞ্চ গড়ে জানিয়েছিলেন প্রতিবাদ। জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছিল। যদিও, অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সেই সময় ডি.আই তথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণ সরকার জানিয়েছিলেন, “যোগ্য লোককেই উপযুক্ত পদে বসানো হয়েছে, সমস্ত নিয়ম মেনে।” অপরদিকে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ফের তাঁর বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে চাপ সৃষ্টি করা এবং ‘মানসিক যন্ত্রণা’ (চাপ) দেওয়ার অভিযোগে চিঠি লিখেছিলেন শহরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। চিঠিতে মারাত্মক অভিযোগ ছিল, ওই স্কুলে তরুণ বাবু’র স্ত্রী চাকরি করেন বলেই, তাঁর অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে অপর শিক্ষিকার উপর ‘মানসিক চাপ’ সৃষ্টি করা হচ্ছে! যদিও, অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছিল ডি.আই-এর পক্ষ থেকে।
তবে কি, এই সমস্ত নানা অভিযোগের কারণেই পুজোর মধ্যেই তড়িঘড়ি বদলির অর্ডার? তাও আবার, মেদিনীপুর থেকে সুদূর শিলিগুড়িতে? প্রশ্ন উঠছে নিঃসন্দেহে। অন্তত তেমনটাই বলছেন ডিপিএসসি’র একাধিক কর্মী ও আধিকারিক থেকে জেলার একাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা। অপরদিকে, শিলিগুড়ি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্বে আসছেন প্রাণতোষ মাইতি। তিনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে। যদিও, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একসময়, তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন বলে সূত্রের খবর। সেক্ষেত্রে, সুদূর শিলিগুড়ি থেকে তাঁর বদলি যে বাড়ির অনেক কাছাকাছি হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য!