তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ জুলাই: সাজানো হয়েছিল মণ্ডপ। এসে গিয়েছিলেন আত্মীয় স্বজনরাও। শুরু হয়ে গিয়েছিল খাওয়া-দাওয়া। চলছিল আনন্দ হুল্লোড়। এমনকি, কন্যার গায়ে হলুদ-ও সারা হয়ে গিয়েছিল। সবাই মিলে হয়তো গাওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন, “সাত পাকে বন্দী হবে আজকে শুভক্ষণ/ সবাই মিলে করি আজ তারই আয়োজন।” হঠাৎ-ই সব পণ্ড হয়ে গেল! দলবল নিয়ে পৌঁছে গেলেন বিডিও (BDO)। পড়ে গেল হুলুস্থুল! গুরু-গম্ভীর কন্ঠে অভিভাবকদের ডাক দিলেন বিডিও। বললেন, “করেছেন কি? ওর (পাত্রী/কনে) তো এখনও ১৮-ই হয়নি! এজন্যই কি সরকারের এতো প্রচেষ্টা? কন্যাশ্রী, স্কলারশিপ, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড? অবিলম্বে বন্ধ করুন বিয়েবাড়ি।‌ ১৮ বছর না হলে বিয়েবাড়ি করবেন না!” ঘটনাটি নারী শিক্ষার অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের এলাকার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার অন্তর্গত চন্দ্রকোনা থানার বাঁকা সুলতানপুর সংলগ্ন মাঝি পাড়ায় মঙ্গলবার দুপুরে ঠিক এই ঘটনাই ঘটে। বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা পৌঁছে এভাবেই এদিন নাবালিকার বিয়ে রুখে দেন।

thebengalpost.net
বিয়েবাড়ি বন্ধ করা হল :

জানা যায়, পরিবারের মেয়েটি’র বয়স মাত্র ১৫। সবে সপ্তম শ্রেণীতে উঠেছিল। আর তার-ই কিনা বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল। এমনকি, মঙ্গলবার ঘটা করে গায়ে-হলুদের পর্বও শেষ হয়েছিল। আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা বিয়ে বাড়ির খাওয়া দাওয়াও শুরু করেছিল। আর, এই ঘটনার খবর যায় চন্দ্রকোনা ১ নং ব্লকের বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারীর কাছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ প্রশাসন সহ ব্লকের আধিকারিকদের নিয়ে ছুটে যান বাঁকা সুলতানপুর গ্রামে। বিডিও সহ প্রশাসনের লোকজনকে দেখেই অনেকে পালিয়ে যান। এরপর, কিশোরী কন্যার বাবার সঙ্গে বিডিও কথা বলেন। মেয়েটি’র শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন এবং অবিলম্বে বিয়েবাড়ি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এমনকি, তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয় যে, ১৮ বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। ব্লক প্রশাসন থেকে এও জানানো হয়, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করল প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেবে। বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী জানান, “মেয়েটি যাতে পড়াশোনা করে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। যে স্কুলে মেয়েটি পড়াশোনা করত, আমরা সেই স্কুলের শিক্ষিকাদের সাথেও কথা বলব। ওর পড়াশোনার বিষয়ে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে।” (ফিচার ইমেজে/ প্রচ্ছদ ছবি প্রতীকী)

thebengalpost.net
শুনশান প্যান্ডেল :