দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ মে: রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জেল খেটেও মাওবাদী পুনর্বাসন প্যাকেজে চাকরি হয়নি শালবনীর শতাধিক বাসিন্দার। আবার, একসময় CPI-M করায়, ঘরবাড়ি-সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ঘাটালের ৪০-টি পরিবারকে। ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেও জমির রেকর্ড সংশোধন হয়নি গড়বেতার তাপস কুমার চন্দ্র’র! সবং এর আব্দুল রউফ কিংবা পিংলার জয়দেব মণ্ডলেরও জমি সংক্রান্ত সমস্যা। কেশপুরের নন্দিনী মাল কিংবা দাসপুরের সুবর্ণ বিশ্বাসের ৬৫ পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি বার্ধক্য ভাতা। স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে ডেবরার তনুশ্রী মন্ডলকে! এমনই নানা সমস্যা কিংবা অভাব-অভিযোগ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মঙ্গলবার (২ মে) জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘জনতার দরবারে জেলাশাসক’- এ যোগ দিয়েছিলেন জেলার কয়েকশো সাধারণ মানুষ।

thebengalpost.net
জনতার দরবারে জেলাশাসক:

উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার (২ মে) থেকেই শুরু হয়েছে ‘জনতার দরবারে জেলাশাসক’ কর্মসূচি। এবার থেকে প্রতি মাসে দু’বার অনুষ্ঠিত হবে এই কর্মসূচি। মঙ্গলবার ঘাটাল, ডেবরা, সবং, পিংলা, খড়্গপুর, শালবনী, গড়বেতা, কেশপুর, মেদিনীপুর সদর- এর কয়েকশো মানুষের নানা অভাব-অভিযোগ, সমস্যা ও বঞ্চনার কথা মন দিয়ে শুনলেন জেলা শাসক খুরশিদ আলী কাদরী। সঙ্গে ছিলেন সকল ADM বা অতিরিক্ত জেলাশাসকরাও। সকাল ১০ থেকে বিকেল ৩-টা অবধি চলে এই জনতার দরবার। সেখানেই হাজির হয়েছিলেন, শালবনীর শতাধিক বাসিন্দা। মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জেল খাটতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু, রাজ্য সরকারের মাওবাদী পুনর্বাসন প্যাকেজে চাকরি পাননি আজও। শালবনী ব্লকের এমনই ১১৩ জন বাসিন্দা মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জনতার দরবারে জেলাশাসক’ এ উপস্থিত হয়ে জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী’র কাছে নিজেদের বঞ্চনার কথা এবং নিয়ম অনুযায়ী চাকরির দাবি তুলে ধরলেন। বঞ্চিতদের মধ্যে প্রদ্যোৎ মাহাতো, অঞ্জন মাহাতো, অমিতা ঘাটুই, অনন্ত সিং, অশোক মাহাতো প্রমুখ বাসিন্দা বললেন, গত কয়েক বছর ধরে জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে থেকে ডিআইজি’র কাছে বিভিন্ন সময়ে আবেদন তুলে ধরলেও, তাঁরা ১১৩ জন বঞ্চিতই থেকে গেছেন। তাই, এদিন জেলাশাসকের দরবারে উপস্থিত হয়ে ফের একবার তথ্য সহকারে নিজেদের আবেদন তুলে ধরলেন তাঁরা। এই বিষয়ে বিকেল ৩-টা নাগাদ জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী জানিয়েছেন, অবিলম্বে পুলিশ সুপার ও স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার সমাধান করবেন।

অন্যদিকে, ঘাটালের দেওয়ান চক গ্রাম পঞ্চায়েতের রঘুনাথপুর গ্রামের ৪০-টি পরিবারের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আসমিনা বিবি এবং তাঁর স্বামী ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। ওই গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব সোহিলা খাতুন, ষাটোর্ধ্ব মহম্মদ আজিজুল হক কিংবা বছর ৪০’র আমির সোহেল জানালেন, “একসময় সিপিএম করতাম এই অভিযোগ তুলে, বিভিন্ন ধরনের সরকারি পরিষেবা থেকে আমাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। কাউকেই আবাস যোজনার বাড়ি দেওয়া হয়নি।” এমনকি, স্বাস্থ্যসাথী থেকে বার্ধক্য ভাতা- নানাভাবে তাঁরা বঞ্চিত বলে জানিয়েছেন। কেশপুরের নন্দিনী মাল, দাসপুরের সুবর্ণ বিশ্বাস দু’জনই ৬৫ পেরিয়েছেন। কিন্তু, বার্ধক্য ভাতা চালু হয়নি। আধার-প্যান কার্ডের সংযুক্তি করন বা ব্যাঙ্কের প্রযুক্তিগত কিছু ত্রুটির জন্য তাঁরা বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক। ডেবরার রাতুলিয়ার তনুশ্রী মন্ডল জানান, তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে। স্বামী এলআইসি’র এজেন্ট ছিলেন। কোনো কাগজপত্র তাঁকে দেওয়া হয়নি! দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর কথাও মন দিয়ে শোনেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। গড়বেতার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব তাপস কুমার চন্দ্র বলেন, “সরকারি ভুলে ৩০ বছর ধরে আমাদের জমির রেকর্ড সংশোধন হয়নি। আমার বাবা, দাদা বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে এখন মারা গেছেন। আমিও গত ২০-২৫ বছর ধরে ঘুরছি। যাই হোক জেলাশাসক আশ্বাস দিয়েছেন।” এদিনের দরবার শেষে জেলাশাসক জানিয়েছেন, যাঁরা এদিন অভিযোগ জানিয়েছেন, ৭ দিনের মধ্যে তাঁদের এই সমাধানের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। বেশিরভাগ অভিযোগ জমি সংক্রান্ত বা ব্যক্তিগত বলেও জানান তিনি। জেলাশাসক স্মরণ করিয়ে দেন, “মুখ্যমন্ত্রীর গ্রিভ্যান্স সেলে এই জেলা থেকে যত অভিযোগ গেছে, তার ৯৯ শতাংশ সমাধান করা হয়েছে।”

thebengalpost.net
মন দিয়ে শুনছেন অভিযোগ: