দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: সরকারি বাস চালকের এক ‘মারাত্মক’ ভুলে জেলা শহর মেদিনীপুরের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা! মেদিনীপুর শহরের এক পরিবারে নেমে এলো সব হারানোর বেদনা! শুক্রবার সাত সকালেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গেছে, সরকারি ওই বাস স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে সঠিকভাবে ব্রেক না দিয়েই নেমে পড়েছিলেন বাসের চালক। তারপরই বাসের বনেট খোলার চেষ্টা করেন খালাসি। সেই সময়ই নিউট্রাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বাস পেছনে গড়াতে থাকে। পেছনে থাকা যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই দানবাকৃতির সরকারি বাস পিষে দেয় এক ব্যক্তিকে! পাশে থাকা তাঁর বাবাও বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। তবে, তিনি কিছুটা সাইডে ছিটকে পড়ায় তাঁকে দ্রুত টেনে বের করে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু, পেছনে থাকা অন্য বাসের মাঝামাঝি স্থানে পড়ে গিয়ে পিষ্ট হয়ে যান তাঁর ছেলে! তাঁদের উদ্ধার করে বাসস্ট্যান্ডের কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় দু’জনকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।‌ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কোতোয়ালি থানার পুলিশ-ও। রীতিমতো সঙ্কটজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকেরা সঠিকভাবে চিকিৎসা শুরু করার আগেই বছর ৪০ এর ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়! হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম রাজনারায়ণ সামন্ত। তাঁর বৃদ্ধ বাবা (বয়স আনুমানিক ৭০)’র শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, চোখের সামনে ছেলেকে হারিয়ে তিনি শোকে পাথর হয়ে গেছেন! ঘটনায় ওই সরকারি বাসকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা।

thebengalpost.net
বাবা ও ছেলে (মৃত) :

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ সরকারি একটি বাস এসে প্রবেশ করে মেদনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে। যাত্রী নামিয়ে ওই বাসের চালক গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে বাথরুমে চলে যান। তারপর বাসের এক হেল্পার বা কন্ডাক্টর বাসের বনেট খুলে মালপত্র বের করার চেষ্টা করেন। সেই সময়ই বাসের হ্যান্ডব্রেক লক না থাকায়, গাড়ি নিউট্রাল হয়ে পেছনের দিকে গড়াতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই সেই সময় যাত্রীভরা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে অনেক মানুষ যাতায়াত করছিলেন। পেছনে আরো বেশ কয়েকটা বাস ছিল। ওই সরকারি বাসের পেছন দিয়ে বাবা ও ছেলে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সরকারি বাসটি পিছোনোর সময় উল্টো দিকে আরও একটি বাসের মাঝে পড়ে যান তাঁরা। নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার আগেই সুবিশাল সরকারি বাস তাঁদের ধাক্কা মারে! পেছনে থাকা অন্য একটি বাসের মাঝে পড়ে পিষ্ট হয়ে যান ছেলে রাজনারায়ণ সামন্ত। দ্রুত বাবাকে কোনোভাবে টেনে বের করে আনেন উপস্থিত অন্যান্য যাত্রী ও পরিবহন কর্মীরা। তবে, ওই সরকারি বাসকে পুনরায় সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে, ছেলে রাজনারায়ণ-কে বের করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়! শেষ পর্যন্ত যখন বের করে আনা হয়, তখন তিনি প্রায় মৃত! দু’জনকেই পাঠানো হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে সঙ্গে সঙ্গেই অক্সিজেন দেওয়া হয় তাঁকে, তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা শুরু করার আগেই মৃত্যু হয় রাজনারায়ণ সামন্ত’র!

এদিকে, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্য এক বাসের চালক শেখ রাজু বলেন, “সরকারি বাসের ওই চালক বাস দাঁড় করানোর পর হ্যান্ড ব্রেক না মেরে বাথরুম চলে গিয়েছিলেন। কন্ডাক্টর বিষয়টি বুঝতে না পেরে, বনেট খোলার চেষ্টা করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” এই ঘটনায় নিজের ভুল স্বীকার করেছেন ওই সরকারি বাসের চালক শ্রীকান্ত মন্ডল। তিনি বলেন, কোন ভাবে বনেট খোলার সময় নিউট্রাল হয়ে এই ঘটনা ঘটেছে! এদিকে, ঘটনা ঘিরে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। স্থানীয়দের ক্ষোভের আগুন আছড়ে পড়ে সরকারি বাস ও বাসের চালককে ঘিরে! ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।

thebengalpost.net
ঘটনা ঘিরে বিক্ষোভ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement) :