দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ মার্চ: বসন্তেই গ্রীষ্মের দাবদাহ পশ্চিম মেদিনীপুরে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, শনিবার মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে, গরম পড়তেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কেও দেখা দিয়েছে গ্রীষ্মকালীন রক্তের সঙ্কট। এ পজিটিভ, এবি পজিটিভ সহ বেশ কিছু গ্রুপের রক্ত প্রায় অমিল। সেক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে বা মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে ডোনার বা প্রত্যক্ষ রক্তদাতাই সম্বল! দু’দিন আগেই (বৃহস্পতিবার) মেদিনীপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাবালিকা পম্পা হেমব্রমের জরুরি অস্ত্রপচারের জন্য এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়ে পড়লে এগিয়ে এসেছিলেন সেখ হানিমুদ্দিন আহমেদ (রাজা) নামে মেদিনীপুর শহরেরই এক যুবক। রোজা ভেঙে রক্ত দিয়েছিলেন তিনি। আজ, শনিবারও ঠিক একই ঘটনা ঘটল।

সম্প্রীতির নজির গড়ে এক ক্যান্সার আক্রান্ত মুসলিম বৃদ্ধ (মমতাজ মণ্ডল)-কে রক্ত দিলেন পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিন্দু যুবক হরেকৃষ্ণ রানা। আবার, মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অরুণ নন্দী নামে এক ব্যক্তির অস্ত্রপচারের জন্য কেশপুর থেকে ছুটে এসে রক্ত দিলেন সেখ মনিরুল ইসলাম। মেদিনীপুর শহরের রক্তদান আন্দোলনের দুই কর্মী, যথাক্রমে মৃত্যুঞ্জয় সামন্ত ও নীলোৎপল চ্যাটার্জির মধ্যস্থতায় শনিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁরা রক্ত দান করেন। মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটির প্যারামেডিক্যাল হাসপাতালে (বিদ্যাসাগর ইন্সটিটিউট অফ হেলথ) ভর্তি বছর ৬২’র ক্যান্সার আক্রান্ত মমতাজ মণ্ডলের জরুরি ভিত্তিতে ‘এ পজিটিভ’ (A+) রক্তের প্রয়োজন হলে, এগিয়ে আসেন পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ বছর ৩০-র হরেকৃষ্ণ রানা। হরেকৃষ্ণ সবংয়ের বাসিন্দা হলেও মেদিনীপুর শহরেই থাকেন। অপরদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অরুণ নন্দীর অস্ত্রপচারের জন্য ‘এবি পজিটিভ’ (AB+) রক্তের প্রয়োজন হলে কেশপুর থেকে বাইকে করে এসে রক্ত দেন বছর ৩৫-র যুবক মনিরুল ইসলাম। মনিরুল তাঁর আত্মীয় মিরাজ আলির কাছ থেকে খবর পাওয়ার পরই কেশপুর থেকে মেদিনীপুর শহরে এসে রক্ত দিয়ে যান। তাঁদের এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “এটা ঠিক, এই সময় থেকেই রক্তের একটু সঙ্কট দেখা দেয় ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে। সেজন্যই আমরা বেশি বেশি করে রক্তদান শিবিরে উৎসাহিত করছি। আর, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির শহর মেদিনীপুরে এই ধরনের মানবিকতাই তো কাম্য!”