দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ ডিসেম্বর: “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সামনেই পৌরসভার বিল্ডিং। তাতে বেসরকারি হাসপাতাল। বোঝাই যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের উপর আস্থা না রেখে, বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে! এর তীব্র নিন্দা করছি। প্রতিবাদ হবে না?” নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এমনই বিস্ফোরক পোস্ট করে তৃণমূল পরিচালিত মেদিনীপুর পৌরসভার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তৃণমূলেরই মেদিনীপুর শহর সভাপতি তথা শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব। বুধবার রাতে সমাজমাধ্যমে (ফেসবুকে) এই সংক্রান্ত পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট করেন তিনি। সর্বশেষ পোস্টে বিশ্বনাথের বিষোদগার, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কত উন্নয়ন। মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন। তার বিপরীতে পৌরসভা জায়গায় বেসরকারি নার্সিংহোম! কি বলবেন?” বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথের এই পোস্ট ঘিরেই শহর তথা জেলার রাজনীতি উত্তাল হয়। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবারই আবার কলকাতা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর তথা মেদিনীপুর শহরে পৌঁছন তৃণমূলের সাংসদ জুন মালিয়া-ও! যদিও, এনিয়ে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক সুজয় হাজরা বলেন, “পৌরসভার বিষয়ে আমি কোনদিন ঢুকিনি। তাই আমি ঠিক বলতে পারব না। তবে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” বিরোধীরা অবশ্য এ নিয়ে “তৃণমূল বনাম তৃণমূল”-ই দেখছেন!
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর শহরের বটতলাচকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মূল প্রবেশপথ (মেন গেট, বর্তমানে কাজ চলছে)-এর ঠিক উল্টোদিকেই অর্থাৎ রাস্তার ওপারেই মেদিনীপুর পৌরসভার আবুল কালাম আজাদ ভবন। গত ১৫-১৬ বছর আগে থেকেই সেখানে নার্সিংহোম ছিল বলে দাবি শহরবাসীর। বর্তমানে, পুরানো নার্সিংহোম ভেঙে সুবিশাল নতুন নার্সিংহোম করা হচ্ছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের একেবারে বিপরীতে (উল্টোদিকেই) হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নজর পড়ছে সকলেরই! এনিয়েই ‘প্রতিবাদ’ কাউন্সিলর তথা শহর তৃণমূলের সভাপতির। এই বিষয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান (পৌরপ্রধান) সৌমেন খান বলেন, “এই ভবন এখন ভাড়া দেওয়া হয়নি। প্রয়াত প্রণব বসু যখন চেয়ারম্যান ছিলেন, তখনই ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বরং, আমরা বকেয়া প্রায় ৭ লক্ষ টাকা আদায় করেছি। সেইসঙ্গে মাসিক ভাড়া ২০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা করেছি। পৌরসভার আয়ের জন্যই এটা করা হয়েছে। এনিয়ে পৌরসভায় আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
অপরদিকে, পোস্টদাতা আর্থাৎ শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা মেদিনীপুর পৌরসভার ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, “আমাদের পৌরসভায় এক আলোচনা হয়, আর রেজল্যুশনে এক লেখা হয়! সে যাই হোক, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের উন্নয়নের জন্য আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা তৎপর। তিনি এটিকে মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের রূপ দিতে চাইছেন। আর তার উল্টোদিকে পৌরসভার জায়গাতে বেসরকারি হাসপাতাল! এটা কি মেনে নেওয়া যায়? তাই অমি প্রতিবাদ করেছি।” এই বিষয়ে বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “ডেঙ্গু মকাবিলা থেকে শহরবাসীকে যে কোন ধরনের পরিষেবা দেওয়া, সবকিছুতেই ব্যর্থ পৌরসভা। তাই পৌরসভার যে ভবনে মেডিক্যাল কলেজে আসা রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জন্য ‘রাত্রি নিবাস’ হওয়ার কথা ছিল, তা এখন রোজগারের জন্য, বলা ভালো কাটমানি খাওয়ার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এদিকে, মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবাও তলানিতে। দু’দিন আগে সিরিঞ্জ, স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছিল না। সেজন্যই তৃণমূলের পৌরসভাও হয়তো বেসরকারি হাসপাতালের উপরই আস্থা রাখছে! এসব না করে, মেদিনীপুর পৌরসভা যদি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অর্থাৎ জেলাশাসকের সাথে কথা বলে মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবা উন্নত করার চেষ্টা করতেন; আর পৌরসভার ওই ভবনে শহরে আসা সাধারণ মানুষের জন্য কম পয়সায় বা বিনে পয়সায় রাত্রি নিবাসের ব্যবস্থা করা হতো, সেটাই ভালো হতো। যদিও, তৃণমূল মানেই অন্যায়, দুর্নীতি! আর, আজ যিনি পোস্ট করেছেন, কাল তিনি চেয়ারম্যান হলেও তাই করতেন।” সিপিআইএমের শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপ বলেন, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নূন্যতম পরিষেবা পাওয়া যায় না বলেই, শহর মেদিনীপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো নার্সিংহোম গজিয়ে উঠছে। আর মেডিক্যাল কলেজের উল্টোদিকের ওই নার্সিংহোমও প্রায় ১০-১৫ বছর আগে থেকেই আছে। এই ঘটনা আসলে তৃণমূল ভার্সেস তৃণমূল ছাড়া আর কিছুই নয়!”