দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ ডিসেম্বর: রাজ্য সরকারের নির্দেশে মেদিনীপুর শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে জেলা পরিবহণ দপ্তর এবং মেদিনীপুর পৌরসভা। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহর যানজট-মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন মেদিনীপুরের নবনির্বাচিত বিধায়ক সুজয় হাজরা-ও। আপাতত টোটো নিয়ন্ত্রণ দিয়েই সেই পদক্ষেপের সূচনা হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে বিধায়কের সাথে কথা বলে। আর এর প্রাথমিক পর্যায় হল- শহর মেদিনীপুরের মোট টোটোর সংখ্যা নির্ধারণ। অর্থাৎ, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন যে পরিমাণ বা যে সংখ্যক টোটো চলাচল করে, তার মধ্যে কতগুলি টোটো মেদিনীপুর শহরের (গ্রামীণ এলাকার নয়); তার একটা সঠিক ধারণা করা। উদ্দেশ্য, গ্রামীণ এলাকা থেকে মেদিনীপুর শহরে প্রবেশ করা টোটোগুলিকে প্রথমেই চিহ্নিত করা এবং সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেই সঙ্গে, টোটো নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করা।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরে হবে টোটো নিয়ন্ত্রণ:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

জেলার পরিবহণ দফতরের (RTO) সঙ্গে এ নিয়ে সম্প্রতি মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান সহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরের বৈঠক হয় বলে সূত্রের খবর। পৌরসভার সভাগৃহে অনুষ্ঠিত সেই বৈঠকে আবার কয়েকজন কাউন্সিলর যোগ দেননি বলেও জানা যায়! বৈঠকে মেদিনীপুর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের টোটোর সংখ্যা গণনা করার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলরদের। ইতিমধ্যে কাউন্সিলররা সেই কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, এই বৈঠকের পরই আবার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন INTTUC-র নাম নিয়ে কিছু সংগঠন শহর জুড়ে মাইকে প্রচার করতে শুরু করে, তাদের দপ্তরে এসে টোটো চালকদের নথি জমা দিয়ে যেতে হবে। তবেই তাঁরা অনুমোদন পাবেন। না হলে পাবেন না! এই ঘটনার পরই বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলির তরফে কড়া সমালোচনা করা হয়। জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস কটাক্ষ করেন, “আসল উদ্দেশ্য কাটমানি আর তোলাবাজি। তাই সরকারি কাজকে ‘বেসরকারিভাবে’ ব্যবহার করতে চাইছে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন INTTUC। আসলে টোটো চালকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই উদ্দেশ্য!” যদিও, শহরকে যানজট মুক্ত করতে অবিলম্বে টোটো নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই বিষয়টি নিয়েই মঙ্গলবার সকালে মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা-র সঙ্গে কথা বলা হলে, তিনি জানান, “বিষয়টি নিয়ে আগেই পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। মেদিনীপুর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মোট কত টোটো রয়েছে, সেই হিসেব করবেন শুধুমাত্র কাউন্সিলাররাই। একটি ফরম্যাট তাঁদের দেওয়া হয়েছে, সেই ফরম্যাট পূরণ করবেন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের টোটো চালক তথা টোটোর মালিকরা। এক্ষেত্রে, টোটোর যিনি মালিক, তিনি নিজে যদি সেই টোটো চালান, তবেই ফরম্যাট পূরণ করতে পারবেন। টোটো নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁরা পারবেন না। আর, কোনও বৈধ বা অবৈধ সংগঠনই এই কাজ করতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নাম নিয়ে যদি এই ধরনের বেআইনি কাজ করতে আসে কেউ বা কারা, প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা করবে। এনিয়ে পরিবহণ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।” তিনি বলেন, “এই বিষয়টি বিজেপি সহ বিরোধীরা হয়তো জানেন না বলেই, এই ধরনের কথা বলছেন।” অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই মেদিনীপুর শহর ও শহরের বাইরে (সতকুই) বিভিন্ন টোটোর শোরুমে পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দিয়ে বেআইনিভাবে টোটো বিক্রির অভিযোগে মোটা অঙ্কের জরিমানা করেছে বলে জানা গেছে প্রশাসনের একটি সূত্রে। শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিধায়ক সুজয় বলেন, “টোটো নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রশাসন তথা সরকারি নির্দেশিকা মেনে। তবে, পৌরসভার এই ফরম্যাটের মধ্য দিয়ে যে বিষয়গুলি উঠে আসবে তা হল, মেদিনীপুর শহরের মোট কতজন বাসিন্দা শুধুমাত্র একটি টোটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁর বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা, কোন রুটে তিনি টোটো চালান এই সমস্ত বিষয়গুলি।” এই কয়েকটি বিষয় ঠিকঠাক উঠে এলেই অবৈধ টোটো এবং গ্ৰামীণ এলাকার টোটোগুলি চিহ্নিত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুর পৌরসভার কাউন্সিলররাও। আগামীদিনে শহরের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার হাজার হাজার টোটোর প্রবেশ বন্ধ করা এবং প্রতিটি টোটোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রুট বেঁধে দেওয়ার মধ্য দিয়ে টোটো নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে, শহরে মোট কত টোটো চলবে বা অটো-টোটোর মধ্যে সমন্বয় রক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশাসনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক। সুজয় বলেন, “এক্ষেত্রে প্রশাসনকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। প্রশাসন যদি বলে, শহরে একটিও টোটো চলবেনা; সেটাও মেনে নিতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই! আবার নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আর শহরবাসীকে যানজট-মুক্ত শহর উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু টোটো নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থেমে থাকা হবে না, পরবর্তী বিষয়গুলিও আলোচনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে করা হবে।”

thebengalpost.net
যানজট-মুক্ত শহরের প্রতিশ্রুতি বিধায়কের: