দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ নভেম্বর: রাজ্যের প্রায় ৫০ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা। সেই সমস্ত রাস্তাতেও ইদানীং বাড়ছে দুর্ঘটনার হার! এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা কমাতে তথা যথাসম্ভব রুখে দিতে IIT খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) দ্বারস্থ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে এক অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আইআইটি খড়্গপুরও। সমস্যা একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল করতে, আইআইটি-র তরফে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে পথ নিরাপত্তা তথা সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির বার্তা জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে রাস্তাগুলি কিভাবে নির্মাণ করলে দুর্ঘটনার হার কমবে কিংবা দুর্ঘটনা প্রতিহত করতে কিভাবে রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন, সেই বিষয়েও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সোমবার থেকে এই প্রশিক্ষণ পর্ব বা কর্মশালা শুরু হয়েছে খড়গপুর আইআইটি-তে। মোট ৮টি রাউন্ডে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ভার্গব মৈত্র। সোমবার প্রথম রাউন্ডের প্রশিক্ষণ শুরু হয় পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া জেলার প্রতিটি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ এবং ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে। বুধবার প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের শংসাপত্র (Certificate)-ও দেওয়া হয় আইআইটি খড়্গপুরের তরফে। প্রশিক্ষণ পর্বে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝানোর সাথে সাথেই, মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও ইঞ্জিনিয়ারদের খড়্গপুর আইআইটি (IIT Kharagpur) সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাগুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাতে-কলমে কিছু বিষয় তাঁদের বোঝানো হয়। সেই সঙ্গে তাঁদের দেখানো হয়, ঠিক কোন কোন কারণে দুর্ঘটনা বেশি হয় কিংবা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দুর্ঘটনা কমতে পারে! দুর্ঘটনা রুখতে প্রত্যন্ত এলাকাতেও পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রচারের সাথে সাথেই, প্রতিটি রাস্তায় সচেতনতামূলক সাইন বোর্ড দেওয়া, রাস্তার উপর মার্কিং করে দেওয়া প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন; সেই বিষয়েও ইঞ্জিনিয়ার এবং পূর্ত কর্মাধ্যক্ষদের বার্তা দেওয়া বলে জানিয়েছেন তিনি। এর ফলে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদী পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের নান্টু দোলই (খড়গপুর-২), সীতেশ ধাড়া (ডেবরা), গৌতম বেরা (শালবনী) প্রমুখ বলেন, “রাজ্য সরকারের তরফে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রচার করা হচ্ছে। সেই প্রচার মূলত পুলিশের তরফেই করা হয়। এবার, দুর্ঘটনা রুখতে আমরা জনপ্রতিনিধিরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করব। প্রত্যন্ত এলাকায় এলাকায় আমরা সেফটি এবং সিকিউরিটির বার্তা ছড়িয়ে দেব। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষ এবং অধ্যাপকদের।” যেভাবে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তাতে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর হার অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে আশাবাদী আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক ভার্গব মৈত্রও।