দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়, সাপের সঙ্গেই ‘ঘর’ করতেন তিনি! শুধু তাই নয়, গত ৪০-৫০ বছর ধরে সাপ নিয়ে অসংখ্য সচেতনতা শিবির করেছেন। সাপ ধরেছেন কয়েক হাজার। পুরানো সখের কারণে, বিষাক্ত কিছু সাপ বাড়িতেও রেখেছিলেন! সেই পোষা সাপের কামড়েই মৃত্যু হল পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তথা প্রবীণ ‘সর্পবিশারদ’ বা ‘সর্পবন্ধু’ দীপক সর্দারের! মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) রাতে একটি ‘পোষা’ কেউটে (Monocled cobra) বা কালো খরিশ-কে খাওয়ানোর সময়ই দুর্ঘটনাবশত আঙুলে বিষাক্ত সাপের ছোবল খান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় ‘অশীতিপর’ দীপক সর্দারের! বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সহকারী সম্পাদক ড. বাবুলাল শাসমল সহ জেলা কমিটির সদস্যরা।
আদতে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা হলেও, গত তিরিশ বছর ধরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বালিচক সংলগ্ন কানুরাম (বা, দনীচক) এলাকাতেই বাস করতেন ‘সর্পবন্ধু’ দীপক সর্দার (মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ হলেও, এলাকায় এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি)। সাপ নিয়েই প্রায় গোটা একটা জীবন কাটিয়ে ফেলেন তিনি। সাপের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নাকি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ছেড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ব্লকের বালিচক সংলগ্ন একটি প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। সারা জীবনে অসংখ্য সাপ উদ্ধার করেছেন। পরিচর্যা করেছেন। গবেষণা করেছেন। সর্বোপরি, বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য হিসেবে সচেতনতা শিবির বা কর্মশালায় নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে সেই সাপের কামড়েই মর্মান্তিক মৃত্যু হল সর্পবন্ধু তথা সর্প বিশারদ দীপক সর্দারের।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে একটি কেউটে (কালো খরিশ) সাপকে খাওয়ানোর সময়, ওই সাপটি তাঁর আঙুলে দংশন করে। দ্রুত তাঁকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়! বুধবার তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের সদস্যদের হাতে। ছিলেন অশীতিপর দীপক সর্দারের বড় ছেলে নুর ইসলাম, মেদিনীপুর শহরের ‘সর্পবন্ধু’ দেবরাজ চক্রবর্তী সহ পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। বছর ৬৫-র নুর বলেন, “বাবা সাপ নিয়েই কাজকর্ম করতেন, গবেষণা করতেন। বাড়িতে সাপ রাখতেন ও। সেই সাপের কামড়েই মৃত্যু হল তাঁর!” বিজ্ঞান মঞ্চের সহকারী সম্পাদক ড. বাবুলাল শাসমল বলেন, “অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা! আমরা একজন বন্যপ্রাণ গবেষক, পরিবেশ প্রেমী ও সর্প বিশারদকে হারালাম। গত ৩০ বছর ধরে বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সর্পবন্ধু হয়েও, সামান্য অসাবধানতায় সাপের কামড়েই মঙ্গলবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত বয়সের কারণেই (প্রায় ৮৪-৮৫) হয়তো চিকিৎসায় সাড়া দিতে পারেন নি তিনি; তবে সকলেরই এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।”