দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ অক্টোবর: ধেয়ে আসছে ‘ঘূর্ণিঝড়’ দানা (Dana)! ওড়িশা উপকূলের পুরী সংলগ্ন স্থলভাগে ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর ভোরের মধ্যে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর। এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৭৩০ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বুধবার এই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ফলে, বুধবার অর্থাৎ ২৩ অক্টোবর থেকে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে মৌসম ভবন। বাংলার উপকূলবর্তী ৯টি জেলাতে বুধবার হলুদ সতর্কতা এবং বৃহস্পতি ও শুক্রবার লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এদিকে, দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম- এই ৯টি জেলার সমস্ত স্কুল বুধবার থেকে শনিবার, টানা চারদিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল পড়ুয়াদের সুরক্ষিত রাখতেই এই পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরামর্শ মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে শিক্ষা দপ্তর। বুধবার থেকে শনিবার (২৩-২৬ অক্টোবর) কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও কোন ক্লাস হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ এই ৯টি জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ (DPSC), বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University) সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উল্লেখ্য যে, ওড়িশা সরকার আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করেছে বেশ কয়েকটি জেলায়।

thebengalpost.net
সমস্ত স্কুল ছুটি ঘোষণা করল পশ্চিম মেদিনীপুর DPSC:

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, ওড়িশা সংলগ্ন পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা দানা-তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হতে পারে! এমনই আশঙ্কা করে মঙ্গলবার থেকে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনে। মঙ্গলবার দুপুরেই ওড়িশা সংলগ্ন দাঁতন ও মোহনপুর এলাকা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী এবং জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। মঙ্গলবার দুপুরে দাঁতন বিডিও অফিসে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। জেলাশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি মোকাবিলায় খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সহ দাঁতন ১, দাঁতন ২, মোহনপুর, কেশিয়াড়ি এবং নারায়ণগড়ের বিডিও-দের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকেই নদী তীরবর্তী এলাকা, দুর্বল বাড়ি বা কাঁচা বাড়ি ও মাটির বাড়িগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার অন্যান্য বিডিওদেরও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলায় একাধিক কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী। পরিস্থিতির দিকে তিনি নিজে প্রতি মুহূর্তে নজর রাখবেন বলেও জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানিয়েছেন, “মঙ্গলবার দুপুর থেকেই জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে আবহাওয়া পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই, জেলার প্রতিটি থানার আইসি, ওসি এবং বিডিওদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করে ত্রানশিবির বা রিলিফ ক্যাম্পে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

thebengalpost.net
জেলাশাসক, পুলিশ সুপারের সাংবাদিক বৈঠক:

দাঁতন থেকে ফিরে বিকেল তিনটে নাগাদ জেলাশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন ডিএম এবং এসপি। তাঁরা জানিয়ে দেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যাতে প্রাণহানির মতো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য তাঁরা বদ্ধপরিকর। এজন্য জেলাবাসীরও সাহায্য চেয়েছেন তাঁরা। অবিলম্বে দুর্বল বা মাটির বাড়ি ছেড়ে নিকটবর্তী ত্রাণশিবিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার মানুষকে ত্রাণশিবিরে উদ্ধার করে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। জেলা জুড়ে একশোর বেশি ত্রাণ শিবির করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ত্রাণ শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত পানীয় জল, খাবার, ওষুধ, অ্যান্টিভেনাম প্রভৃতি থাকছে বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এবং মেদিনীপুর পৌরসভার তরফেও কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডিএম খুরশিদ আলী কাদেরী। অন্যদিকে, ‘দানা’ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ১৩৫টি ট্রেন বাতিল করল দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের খড়্গপুর সহ বিভিন্ন ডিভিশন। ২৩-২৫ অক্টোবর, এই তিন দিনে মোট ১৩৫টি ট্রেন বাতিল করা হল দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের তরফে। লোকাল, প্যাসেঞ্জার থেকে শুরু করে সুপারফাস্ট এবং বন্দেভারত এক্সপ্রেসও আছে বাতিল হওয়া ট্রেনের তালিকায়। দানা-বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী-কর্মসূচিও বাতিল করা হয়েছে ভারত সরকার তথা ভারতীয় রেলওয়ের তরফে। প্রসঙ্গত, বুধবার সকালে খড়্গপুর ডিভিশনের অধীন ওড়িশার বাংড়িপোশি স্টেশনে পৌঁছনোর কথা ছিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর। তারপর, খেমাশুলি স্টেশনেও আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু, এই সম্পূর্ণ সফরসূচি বাতিল করা হয়েছে। থার্ড লাইন উদ্বোধনের পরিবর্তিত সফরসূচি পরে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে খড়গপুর ডিভিশনের তরফে।

thebengalpost.net
শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা: