দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ অক্টোবর: নাবালকের দেহ উদ্ধার ‘রেল শহর’ খড়্গপুরের ১৮নং ওয়ার্ডের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার সাইঁবাবার মন্দির সংলগ্ন পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টার থেকে। মৃত বছর দশেকের নাবালকের নাম মনোজিৎ সিং। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশের তরফে গ্রেফতার করা হয়েছে মৃত নাবালকের দিদি লিজা সিং ও সোনু কুমার নামে তার এক বিশেষ বন্ধু বা প্রেমিককে। বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় মৃত নাবালকের মা দিজিয়া দেবীকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার।
জানা যায়, বছরখানেক আগে মৃত্যু হয়েছে মনোজিৎ সিংয়ের বাবা রাজু সিং-এর। রাজু ছিলেন পেশায় রেলকর্মী। মাসখানেক আগেই তাঁর সেই চাকরি পেয়েছে তাঁর মেয়ে লিজা সিং। এদিকে, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মনোজিতের মা দিজিয়া দেবী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর টাউন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে অভিযোগ করেন, তাঁর ১০ বছরের নাবালক ছেলে (মনোজিৎ)-কে বিকেল (শুক্রবার বিকেল) থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে। এরপরই, পুলিশের তরফে তদন্ত ও তল্লাশি শুরু করা হয়। তল্লাশি চলাকালীন শনিবার দুপুরে দিজিয়াদের কোয়ার্টারের উল্টো দিকের পরিত্যক্ত একটি কোয়ার্টার থেকে দুর্গন্ধ অনুভব করেন পুলিশকর্তারা। এরপর, ভাঙাচোরা সেই পরিত্যক্ত কোয়ার্টার থেকেই মনোজিতের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহ থেকে বীভৎস দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল বলে স্থানীয়রাও দাবি করেছেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অন্তত দু’দিন বা ৪৮ ঘন্টা আগে খুন করা হয়েছে ওই নাবালককে। সেক্ষেত্রে মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে বা শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ কেন নিখোঁজ ডায়েরি করা হল, তা নিয়েই পুলিশের মনে সন্দেহ জাগে! তবে, কি মনোজিৎ-কে তার পরিবারের সদস্যরাই খুন করে পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে রেখে এসেছিলেন? এমনই চিন্তাভাবনা থেকে মৃত নাবালকের মা ও দিদিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশি জেরার মুখে মৃত মনোজিতের দিদি ভেঙে পড়েন বলে জানা যায়। বিশেষ বন্ধু বা প্রেমিকের সঙ্গে যোগসাজস করে সেই যে ভাইকে খুন করেছে, তাও সে স্বীকার করেছে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে, ঠিক কি কারণে খুন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মৃত বাবার চাকরি পেয়েছে দিদি। ভবিষ্যতে ভাই যাতে কোনরকম অসুবিধা সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্যই ‘পথের কাঁটা’ সরিয়ে দিতে ঠান্ডা মাথায় ভাইকে খুন করেছে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে! জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। মৃত নাবালকের দিদি ও তার বিশেষ বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে তৃতীয়ার দিনই রহস্যজনক এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ‘রেল শহর’ খড়গপুরে!