দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর: স্ক্রাব টাইফাসে (Scrub typhus) আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম মৃত্যু হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। বছর পনেরোর ওই কিশোরী মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত এল্লাবনি এলাকায় মামাবাড়িতে (বাড়ি ঝাড়গ্রামে) থাকত। চাঁদড়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর নাম মৌপ্রিয়া বেরা। তীব্র জ্বর, গোটা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা, বমি বমি ভাব- প্রভৃতি উপসর্গ নিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের CCU-তে চিকিৎসাধীন ছিল সে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে তার মৃত্যু হয়! ঘটনার পরই ওই এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের টিম পাঠানো হয়েছে বলে শুক্রবার সকালে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী।
স্বাস্থ্য দপ্তর ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল ওই কিশোরী। সঙ্গে বমি বমি ভাব থাকায় জন্ডিসের চিকিৎসা চলছিল বাড়িতেই। এক গ্রামীণ চিকিৎসক জ্বর ও বমি বন্ধের ঔষধ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। তবে, সপ্তাহ খানেক এভাবে চিকিৎসা চলার পর, ফের তীব্র জ্বর আসায় গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই কিশোরীকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায়, সিসিইউ-তে তার চিকিৎসা চলছিল বলে জানা যায়। তবে, শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তার মৃত্যু হয়। এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “সঠিক চিকিৎসা শুরুর ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাওয়ার কারণেই এমন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটল। জঙ্গল অধ্যুষিত এই এলাকায় প্রতি বছর শয়ে শয়ে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে, ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে সেরে ওঠে সকলেই। মারণ রোগ নয়। এক্ষেত্রে, দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ার কারণে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাই CCU-তে থাকলেও, চিকিৎসায় তেমনভাবে সাড়া দেয়নি।”
CMOH ডঃ সারেঙ্গী এও জানান, ট্রম্বিকিউলিড মাইটস (Mites) বা টিক- এর মতো পরজীবী পোকার কামড় থেকে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু মানবদেহে ছড়ায়। এই রোগের উপসর্গগুলি হল তীব্র মাথাব্যথা, অত্যধিক জ্বর, গা- হাত- পায়ে ব্যথা, বমি ভাব ইত্যাদি। সাধারণত জঙ্গলের আশেপাশে কিংবা কৃষিজমিতে ওই ধরনের পোকা দেখা যায়। তবে, শহরের ঘরবাড়ি বা আবাসনের আশেপাশে ছোট ঝোপঝাড়, গাছপালা কিংবা পোষ্যের গায়েও এই ধরনের পোকার দেখা হামেশাই মেলে। সাধারণত বর্ষায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। প্রাথমিকভাবে, এই পোকা কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কোনও ব্যথা অনুভব হয় না। তবে পরে তা শরীরের ভিতরে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। একটা জায়গায় লাল দাগ বা র্যাশ দেখা যায়। এই জীবাণুর প্রকোপেও জ্বর এবং শরীরে ব্যথা হয়। তবে, সাধারণ ভাইরাল জ্বরের তুলনায় তার তীব্রতা অনেক বেশি হয় এবং অনেকদিন ধরে থাকে বলে মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক জানিয়েছেন। কাজেই এই সময়ে জ্বর হলেই সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলেই মত তাঁর। একইসঙ্গে জেলার CMOH ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী এও পরামর্শ দিয়েছেন, গ্রামের দিকে খালি পায়ে বা বাচ্চারা ছোট প্যান্ট পরে এই সময়ে না ঘোরাই ভাল। বাইরে থেকে আসার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত-পা ধোওয়া প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে জামাকাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পরার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।