দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ সেপ্টেম্বর: অবশেষে প্রবল চাপের মুখে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল (The West Bengal Medical Council) থেকে সন্দীপ ঘোষ ‘ঘনিষ্ঠ’ তিন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর)। এঁরা হলেন যথাক্রমে- বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, অভীক দে এবং মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক। অপরদিকে, ‘শোকজ’ নোটিস পেলেন আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। তিন দিনের মধ্যে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগের উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারলে, বাতিল হতে পারে তাঁর রেজিস্ট্রেশনও! এদিকে, স্বাস্থ্য ভবনের পর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাস এবং প্রাক্তন আরএমও অভীক দে-কে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল (WBMC)-ও। অভীক, বিরূপাক্ষের পাশাপাশি সাসপেন্ড হয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ‘বহিষ্কৃত’ হাউসস্টাফ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকও।
উল্লেখ্য, চিকিৎসক নেতা বিরূপাক্ষ, অভীক এবং মুস্তাফিজুর মেডিক্যাল কাউন্সিলের (WBMC) গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তবে, বিরূপাক্ষ এবং অভীক ‘ইলেক্টেড’ মেম্বার হলেও, মুস্তাফিজুর ‘নমিনেটেড’ মেম্বার ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনজনই সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক-নেতা হিসেবে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছড়ি ঘোরাতেন বলে অভিযোগ। নানা দুর্নীতির সঙ্গেও তাঁরা যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের TMCP ইউনিটের হেড (চিফ কো-অর্ডিনেটর) তথা সদ্য ‘বহিষ্কৃত’ হাউসস্টাফ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের বিরুদ্ধে র্যাগিং, হুমকি, প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ছিল। পড়ুয়াদের তথা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের চাপে তাঁকে ইতিমধ্যেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ডাকে উপস্থিত হওয়া ছাড়া, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে, রাজ্যের শাসকদলের প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতা অভীক দে’র হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। পাশাপাশি পরীক্ষার নম্বরে কারচুপি, মার্কশিটের নম্বরে হেরফের, টুকলি, দুর্নীতি এবং বিশেষত পড়ুয়াদের হুমকির ঘটনার তদন্তে বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। তিনদিনের মধ্যে ওই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। অভীক-কে ইতিমধ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP)-র তরফেও বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও, মুস্তাফিজুরকে এখনও কেন TMCP-র তরফে বহিষ্কার করা হয়নি, তা অবশ্য জানা যায়নি!
একইসঙ্গে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করা সত্ত্বেও এখনও মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে অভীক, মুস্তাফিজুরদের নাম ‘কেন’ জ্বলজ্বল করছে, সেই উত্তরও মেলেনি। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ওয়েবসাইট খুললে এখনও এক্সিকিউটিভ কমিটিতে জ্বলজ্বল করছে অভীক দে-র নাম। আবার, P & E ৩নং কমিটিতে ডঃ রবি হেমব্রম (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ENT বিভাগের চিকিৎসক তথা IMA-র জেলা শাখার সম্পাদক), ডঃ তারাপদ ঘোষ (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শিশু রোগ বিভাগের প্রধান তথা IMA-র জেলা শাখার সভাপতি), ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী (CMOH, Paschim Medinipur)-দের সঙ্গেই এখনও জ্বলজ্বল করছে মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের নাম। এ নিয়ে ডঃ হেমব্রমকে শনিবার দুপুরে ফোন করা হলে, তিনি জানান, “আমি খুবই ব্যস্ত ছিলাম। এখনও কিছু জানিনা। মেল বক্স চেক করা হয়নি। দেখে জানাব।” তাঁর সংযোজন, “মুস্তাফিজুর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ মেম্বার ছিলো না। নমিনেটেড মেম্বার ছিল। তবে, সাসপেন্ড করা হয়েছে যখন নামও বাদ যাবে স্বাভাবিক নিয়মে।” যদিও, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল-ই শুধু নয়, ওয়স্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস (WBUHS)-র ওয়েবসাইট খুললেও অভীক, মুস্তাফিজুরদের ‘ছবি’ একেবারে হোম পেজেই জ্বলজ্বল করছে এখনও! যা দেখেশুনে শনিবার ফের একবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা বললেন, “এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, মুস্তাফিজুরদের প্রভাব কতখানি!”