দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ আগস্ট: স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘আঁতুড়ঘর’ ছিল ক্ষুদিরামের মেদিনীপুর। যথাযোগ্য মর্যাদায় সেই মেদিনীপুরের বিভিন্ন প্রান্তেই পালিত হল ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস। রীতি ও ঐতিহ্য মেনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলাশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে। তারপর আয়োজিত হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যদিও, এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার কিংবা জেলা পুলিশের কোনও আধিকারিক উপস্থিত না থাকায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। একইসঙ্গে এবার সংক্ষিপ্ত প্যারেড বা কুচকাওয়াজ নিয়েও নানা জল্পনা ছড়ায়। তবে, পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যরাত অবধি মহিলাদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত ছিলেন জেলার বেশিরভাগ পুলিশকর্মীরা। সেজন্যই এদিন জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান বা জেলাশাসককে ‘অভিবাদন’ জানানোর অনুষ্ঠানে কাঁটছাঁট করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বেলা গড়াতেই আরও একটি বিষয়ও উঠে আসে। স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য দিনেই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ নিজেদের ‘সুরক্ষা’ কর্মসূচি নিয়ে পৌছে গিয়েছিলেন কেশপুর ব্লকের অধীন আনন্দপুর থানার শ্যামচাঁদপুর গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালেই আনন্দপুরের প্রত্যন্ত এই গ্রামে অনুষ্ঠিত ‘সুরক্ষা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। স্বাস্থ্য দপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষার এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীও। এদিনের এই কর্মসূচিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ছাড়াও, চশমা প্রদান করা হয় ছাত্র-ছাত্রী সহ এলাকার সাধারণ সাধারণ মানুষকে। জেলা পুলিশ সুপার জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এবং স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় জেলা পুলিশের এই ‘সুরক্ষা’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের পুণ্য মুহূর্তে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ‘সুরক্ষিত’ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।”
অন্যদিকে, স্বাধীনতা দিবসের বিকেলে, জেলা শহর মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির প্রাঙ্গণে মেদিনীপুর পৌরসভার উদ্যোগে ৭দিন ব্যাপী ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ ফুড ফেস্টিভ্যাল ও মেলার উদ্বোধন করেন মেদিনীপুরের সাংসদ জুন মালিয়া। উপস্থিত ছিলেন পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ পৌরসভার অন্যান্য কাউন্সিলাররাও। আগামী ২১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত এই মেলা চলবে। উল্লেখ্য যে, মেদিনীপুর পৌরসভার অধীন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উৎপাদিত দ্রব্যের প্রদর্শনী ও বিপণনের উদ্দেশ্যেই এই মেলার আয়োজন বলে জানিয়েছেন পৌরপ্রধান। মেলায় বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্যাদির সাথে সাথেই খাদ্যদ্রব্যের পসরা সাজিয়েও বসেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। একইসঙ্গে এদিন পৌরসভার তরফে বিশেষভাবে সক্ষম বেশ কিছুজনেকে হুইল চেয়ার উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। অপরদিকে, শহরের রাঙামাটিতে অবস্থিত স্বনামধন্য ইংরেজি মাধ্যম (CISCE অনুমোদিত) স্কুল বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনেও (Vidyasagar Shishu Niketan) যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ৭৮তম ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালন করা হয়। সকাল ৯টা নাগাদ স্কুল ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখার্জি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপাল চান্দা মজুমদার সহ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। নিজের বক্তৃতায় মহকুমাশাসক বিশেষভাবে স্মরণ করেন মেদিনীপুরের ‘কিশোর বিপ্লবী’ তথা অগ্নিযুগের মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্ষুদিরাম বসু’কে। এদিন, স্কুলের তরফে সম্মানিত করা হয় বৃদ্ধাশ্রমের ২৪ জন আবাসিককে। শুক্রবার স্কুল ক্যাম্পাসে একটি এক্সিবিশন বা প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলের অধ্যক্ষা (Principal) চান্দা মজুমদার।