দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জুলাই: অবশেষে পাঁচ দিনের মাথায় উঠল মেদিনীপুর কলেজ রোডের হকার বা ফুটপাত ব্যবসায়ীদের আমরণ অনশন। প্রয়োজন পড়ল না সর্বদলীয় বৈঠকেরও! হকারদের কিছু দাবি মেনে নেওয়ার পরই মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা অনশন তুলে নেন। বিকেল নাগাদ পৌরপ্রধান সৌমেন খান, উপ-পৌরপ্রধান অনিমা সাহা, কাউন্সিলর তথা মেদিনীপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব, কাউন্সিলর তথা শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌ রায়, কাউন্সিলর গোলোক মাজি, সৌরভ বসু, টোটোন শাসপিল্লি, সুসময় মুখার্জি সহ মেদিনীপুর পৌরসভার বেশিরভাগ কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে মেদিনীপুর কলেজ রোড থেকে পুনরায় ডি.আই অফিসের গলিতে ফিরে যান অনশনকারী হকাররা।
যদিও, পাঁচ দিনের মাথায় হকারদের এভাবে গুটি গুটি পায়ে ডি.আই অফিসের গলিতে ফিরে যাওয়ার ‘নেপথ্যে’ অন্য এখ গল্পও খুঁজে পাচ্ছেন শহরবাসী! জানা যায়, পৌরপ্রধান সৌমেন খানের আবেদনে সাড়া দিয়ে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব, শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌ রায় সহ জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র অনুগামী ১০ জন কাউন্সিলর ‘সহযোগিতার হাত’ বাড়িয়ে দেওয়ার পরই নাকি হকারদের ‘অনশন’ তোলার কাজ ‘সহজ’ হয়েছে! উল্লেখ্য যে, পৌরপ্রধান সৌমেন খান সহ তৃণমূলের বাকি ১০ জন কাউন্সিলর নব-নির্বাচিত সাংসদ (তথা, সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক) জুন মালিয়া-র অনুগামী হিসেবে পরিচিত। সেই হিসেবে এদিন জুন ও সুজয়ের অনুগামী শাসকদলের ২০ জন কাউন্সিলর ‘এক’ হতেই মেদিনীপুর শহরের এক বড় সমস্যা মিটল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ঠিক যেভাবে দু’দিন আগেই দুই গোষ্ঠী ‘এক’ হয়ে, পৌরসভার সাফাই কর্মীদের বেতন-সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে ‘ধর্মঘট’ তুলতে বাধ্য করিয়েছিলেন; এদিনও ঠিক সেভাবেই মেদিনীপুর কলেজ রোডের হকারদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে গলিতেই ফেরত পাঠানো হয়! হকারদের তরফে এদিন এসরার আলী খান বলেন, “পৌরসভার তরফে আমাদের বলা হয়, মেদিনীপুর কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের মতো দু’টি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ব্যবসা করা উচিত হবেনা। ওখানে সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে। তাই, আমাদের ডিআই অফিসের গলিতেই ফিরে যাওয়ার বিষয়ে ওনারা অনুরোধ করেন। পুজোর পর ওখানেই স্থায়ী সেড নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, পর্যাপ্ত জল, আলো সহ সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। আমাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ হকাররাই এতে সন্তুষ্ট। আমরা আজ থেকেই ডিআই অফিসের গলিতে ব্যবসা করব।”
মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, “মেদিনীপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব সহ মেদিনীপুর পৌরসভার সমস্ত কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে আমরা আজ হকার ভাইদের নিয়ে একটি বৈঠক করি। সেখানে আমরা তাঁদের জানাই, মেদিনীপুর কলেজ এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের মত ঐতিহ্যবাহী দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঠিক মুখেই এভাবে ব্যবসা করা ঠিক নয়। ব্যস্ততম এই কলেজ রোডে দীর্ঘদিন ধরে অনশন করাও উচিত নয়। এরপরই তাঁদের কিছু দাবি আমরা মেনে নিই। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাসও দিই। তারপরেই তাঁরা অনশন তুলে নেন। ডিআই অফিসের গলিতেই তাঁরা ব্যবসা করবেন। পর্যাপ্ত লাইট, জল সহ আগামীদিনে পৌরসভা ও প্রশাসনের উদ্যোগে হকার ভাইদের স্থায়ী সেড নির্মাণ করে দেওয়া হবে। একইসঙ্গে ওঁদের দাবি ছিল, এখনও বাইরে যাঁরা ব্যবসা করছেন তাঁদেরও ভেতরে পাঠাতে হবে। আমরা সেই দাবিও মেনে নিয়েছি। আর, বাইরে যে সমস্ত সবজি দোকান আছে, তাঁদের সন্ধ্যাবেলায় এখানে এভাবে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।” শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা মেদিনীপুর পৌরসভার ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, “হকারদের কিছু দাবি ছিল। তা আমরা মেনে নিয়েছি। একইসঙ্গে তাঁদের বলা হয়েছে, ঐতিহ্যশালী এই জায়গাতে ব্যবসা করা যাবে না। একটি প্রোজেক্টের মাধ্যমে তাঁদের স্থায়ী সেড নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বার দেওয়া হয়েছে পৌরসভার তরফে।” উল্লেখ্য যে, সপ্তাহ তিনেক আগেই ডিআই অফিসের গলিতে পুনর্বাসন দেওয়া সত্ত্বেও, গত শুক্রবার সকাল থেকে হঠাৎ করেই ফের মেদিনীপুর কলেজ-কলেজিয়েট সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশের ফুটপাতে ফিরে আসা শুরু করেছিলেন হকাররা। প্রতিবাদে পথ অবরোধ করে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন ‘ঐতিহাসিক’ মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত) এবং ‘হেরিটেজ’ মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। পাল্টা আমরণ অনশন শুরু করেছিলেন হকাররা। অবশেষে, পাঁচ দিন পর সেই সমস্যা মিটলো শাসকদল এবং পৌরসভা ‘এক’ হয়ে সমস্যা সমাধানের পথ বের করায়! যদিও, বাম-বিজেপি’র তরফে পুরো বিষয়টিকেই ‘নাটক’ বা ‘গট-আপ গেম’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে!