thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ক্লিনিকে বৃহস্পতিবার:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জুন: অটজিম বা ব্যাপক অর্থে ‘অটিজিম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার’ (ASD/Autism Spectrum Disorder) সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ন্ত শিশুদের (Period of Development) ক্ষেত্রে এক সুপরিচিত সমস্যা (Common Problem)। কথা বলতে না পারা অথবা কথা না বলা, চুপচাপ থাকা, অল্পতেই রেগে যাওয়া, কোনও একটা জিনিসের মধ্যেই ডুবে থাকা বা সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকা, ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে থাকা, অকারণে হেসে যাওয়া- শিশুদের মধ্যে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য দেখা দিলে তা অটিজিম (আত্মমগ্নতা)-র লক্ষণও হতে পারে। যদিও, বেশিরভাগ বাবা-মা’ই প্রথম প্রথম শিশুর মধ্যে এই সমস্ত বিষয়গুলি ধরতেই পারেন না, কিংবা কিছুটা উপেক্ষাই করেন! পরে সমস্যা বাড়লে, চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হন। রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই অটিজিম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) আক্রান্ত শিশুদের জন্যই এবার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ক্লিনিকে বৃহস্পতিবার:

রাজ্য সরকারের নির্দেশে জেলা প্রশাসন তথা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রাথমিকভাবে জেলায় ৬৫৩ জন অটিজিম আক্রান্ত শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে। তাদের রোগ বা সমস্যা নির্ধারণ করে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক বিশেষ ক্লিনিকের উদ্বোধন করা হল বৃহস্পতিবার (২০ জুন)। প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এই ক্লিনিকে পরিষেবা দেওয়া হবে চিহ্নিত শিশুদের। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই বিষয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ মৌসুমী নন্দী বলেন, “শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় (২ থেকে ৫ বছর বয়সী) তার বিকাশ (Development) ও আচরণের (Behavior or Communication) ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকে, যা মায়েরা ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত ধরতে পারেননা! এরা অটিজিম আক্রান্ত কিনা তা প্রথমে ধরতে হবে, তারপর তার সমস্যার জায়গাটা চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। তাই, আমারা চিকিৎসকদের একটা স্পেশাল টিম গড়ে দিয়েছি। তাঁরাই অটিজিম আক্রান্ত শিশুদের চিহ্নিত করে তাদের চিকিৎসা শুরু করবেন। এক্ষেত্রে আমাদের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞরাই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করবেন। তবে, ওই টিমে অন্যান্য চিকিৎসকেরাও থাকবেন।”

ডঃ নন্দী এও জানিয়েছেন, অটিজিম মোকাবিলায় যে টিম গড়ে দেওয়া হয়েছে বা অটিজিম আক্রান্তদের জন্য উদ্বোধিত ক্লিনিকে যে চিকিৎসকদল পরিষেবা দেবেন, তার নোডাল ডক্টর বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে থাকছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ প্রকাশ চন্দ্র ঘোষ (ডঃ পি.সি ঘোষ)। তাঁকে সহায়তা করার জন্য থাকবেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডঃ তারাপদ ঘোষ এবং হাসপাতালের সুপার ডঃ জয়ন্ত রাউত। এছাড়াও, থাকবেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরাও। ডঃ তারাপদ ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, “অটিজিম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার হল মূলত অন্যের সাথে কমিউনিকেট করতে না পারা বা মিশতে না পারা, অপরের ভাষা বা ইশারা বুঝতে না পারা এবং নিজেকেও তুলে ধরতে না পারা (Difficulties in interacting with other people or differences in how they interact with others)-র সমস্যা। এর পেছনে জেনেটিক ডিসঅর্ডার (জিনগত সমস্যা) যেমন থাকতে পারে, ঠিক তেমনই পরিবেশের প্রভাব এবং নানা শারীরিক-মানসিক সমস্যাও থাকতে পারে। তবে, এই সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলার পেছেনে পরিবেশের একটা বড় প্রভাব আছে। যৌথ পরিবারে বা বড় পরিবারে এই সমস্যা কমই হয়। সেখানে দাদু, ঠাকুমা, কাকু, জেঠুরা থাকার জন্য শিশুদের কথা বলা ও কথা শেখার সুযোগ অনেক বেশি। কিন্তু, এখনকার ছোট পরিবারে শিশুদের সঙ্গে কথা বলার লোকই নেই। ফলে, একদিকে যেমন তার ভাষার বিকাশ দেরিতে হতে পারে; ঠিক তেমনই নিজেকে সে গুটিয়ে নিতে পারে বা নিজের মধ্যেই ডুবে থাকতে পারে। এর প্রভাব পড়ে তার আচার-আচরণে। এমনকি, শৈশব থেকেই তার মধ্যে ডিপ্রেশন বা হতাশা এসে যেতে পারে।” এছাড়াও, নানা কারণে শিশুরা অটিজিম আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন ডঃ ঘোষ। এই ধরনের ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ‘সুস্থ’ করে তুলতেই মেডিক্যাল কলেজের এই বিশেষ ক্লিনিকের উদ্বোধন করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতালের সুপার ডঃ জয়ন্ত রাউত।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ক্লিনিকে অধ্যক্ষ, সুপার সহ চিকিৎসকরা: