দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২০ জুন: “…একটা বালিশও নেই! এই নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। জানালা আছে তো কাঁচ নেই, কাঁচ আছে তো জানালা নেই। এই তো দেখুন না অবস্থা! এখানে সুস্থ লোক ভর্তি থাকলেও মরে যাবে! আমি আমাদের নেতৃত্বদের বলেছি, ওঁকে ইমিডিয়েট কোনও বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে।” বুধবার বিকেলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সভাপতি মৌমিতা সিংহের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এসে ঠিক এভাবেই জেলা সদর হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবা ও পরিকাঠামোর প্রতি বিদ্রুপ ছুঁড়ে দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রসঙ্গত, কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রী তথা বিজেপি-র মণ্ডল সভানেত্রী মৌমিতা সিংহ তৃণমূল নেত্রী সহ কল্পনা শিট সহ অন্যান্যদের দ্বারা প্রহৃত হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বিষয়টি পোস্ট করে ধিক্কার জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার বিকেল ৩-টা নাগাদ সশরীরে তিনি পৌঁছে যান মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মৌমিতা-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরোনোর পথেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন।
পাল্টা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “পুরোটাই তো নাটক! ওনার (মৌমিতা সিংহের) তো কিছুই হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরের ঘটনা। বিরোধী দলনেতা এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করার পর, সন্ধ্যায় এসে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ওনাকে আর কি পরিষেবা দেবেন! যদিও সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার, তবুও আমি বলব, এই মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো অনুযায়ী যা পরিষেবা দেওয়া উচিত, তার থেকে কয়েক গুণ বেশি পরিষেবা দিতে হয়। তার মধ্যেই এখানকার চাইল্ড ডিপার্টমেন্ট, মাতৃমা বিভাগ, ইএনটি বিভাগ কলকাতা বাদে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সেরা। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এখানে মাতৃমা বিভাগ ছাড়াও কার্ডিয়লজি বিভাগ হয়েছে। নিউরো-র চিকিৎসাও হচ্ছে। যথেষ্ট ভালো পরিষেবা দেওয়ার হয়। গত ২-৩ বছরে পরিকাঠামোগত অনেক উন্নতি হয়েছে। বাকি কাজও চলছে! ওনাদের লুটের অনেক টাকা আছে, বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতেই পারেন। কিন্তু, জেলা হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার গরীব মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে। গদ্দর অধিকারীর মুখে এসব কথা মানায়না!” হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত রাউত বলেন, “পরিষেবা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকা উচিত নয়! আর পরিকাঠামো আরও উন্নত করার কাজ চলছে।”
উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার দুপুরে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী সমিতির একটি বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন বিডিও। বৈঠক চলাকালীনই বিজেপি-র পঞ্চায়েত সদস্যা তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রী মৌমিতা সিংহের উপর তৃণমূলের মহিলা রাজ্য সাধারণ সম্পাদিকা ও জেলা পরিষদের সদস্যা কল্পনা শিটের নেতৃত্বে হামলা চলে বলে অভিযোগ। মৌমিতা-র প্রহৃত হওয়ার পরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করছিলেন শুভেন্দু। সন্ধ্যায় তাঁকে ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এনিয়ে বুধবার শুভেন্দু বলেন, “অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে ডেকে তৃণমূলের গুন্ডা (আমি বলব ‘গুন্ডি’) কল্পনা শিটের নেতৃত্বে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেত্রী মৌমিতা সিংহের উপর ক্ষেপা কুকুরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। আমি সবার প্রথমে বিডিওর গ্রেফতারি চাইব। কারণ, উনিই বৈঠকে ডেকেছিলেন। তারপর সরকারি অফিসে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে এটা প্রমাণিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ-প্রশাসন-হার্মাদ সব একাকার করে দিয়েছেন। মূল অভিযুক্ত কল্পনা শিট যাতে গ্রেফতার হয়, জেলে যায়; সেটা আমি নিজে দেখব।” এনিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় বলেন, “কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির ২৭ জন সদস্যের মধ্যে আমাদেরই ২৫ জন। বিজেপি-র মাত্র ২ জন সদস্য বা সদস্যা। হামলা বা মারামারির মতো পরিস্থিতিই তো নেই! শুধুমাত্র নাটক করে, প্রচারের আলোয় থাকার চেষ্টা করছে বিজেপি।”