দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ মে: বঙ্গে বর্ষা আসে জুনে। ৪ জুন ‘বর্ষা’ আসবে কিনা- তা এখনও জানায়নি আলিপুর (আবহাওয়া দফতর)! তবে, ‘বর্ষা’ যে নামবেই; তা নিয়ে ‘আশাবাদী’ জুন (তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া), অগ্নি (বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল)- দু’জনই। শুক্রবার (৩ মে) চড়া রোদ উপেক্ষা করেই প্রায় ৮-১০ হাজার কর্মী-সমর্থকদের আবেগ আর উৎসাহকে সঙ্গী করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন মেদিনীপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা। ওইদিন অবশ্য বিজেপি-র ঘাটাল লোকসভার প্রার্থী হিরণ-ও মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এসেছিলেন এই মুহূর্তে রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রধান কান্ডারী তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আজ, সোমবার (৬ মে) অপেক্ষাকৃত ‘রোদ-হীন’, মেঘলা দিনে মনোনয়ন পেশ করলেন মেদিনীপুর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী জুন। সুসজ্জিত নানা ট্যাবলো সহযোগে জুনের বর্ণাঢ্য মনোনয়ন-মিছিলেও লোক হয়েছিল বেশ ভালোই। সংখ্যাটা কমবেশি ১০-১২ হাজার হবেই, মত বিভিন্ন মহলের।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল সকাল মন্দির-মসজিদ-গির্জায় প্রার্থনা জানানোর পর, শহরের ফেডারেশন হলের সামনে প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির আবক্ষ মূর্তিতে প্রণাম জানিয়ে এবং মালা পরিয়ে মনোনয়ন জমা করতে বেরোন জুন। সুসজ্জিত গাড়িতে রীতিমত চন্দ্র (মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য), শশী (মন্ত্রী শশী পাঁজা) পরিবেষ্টিত হয়ে এবং বিপুল জমায়েতকে সঙ্গী করে এগিয়ে যান জুন। জুনের মনোনয়নে যোগ দিতে একদিকে যেমন সুদূর কলকাতা থেকে উড়ে এসেছিলেন রাজ্য ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী যথাক্রমে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং শশী পাঁজা; ঠিক তেমনই সমস্ত দ্বন্দ্ব-অভিমান ভুলে যোগ্য ‘সেনাপতি’-র মতোই আগাগোড়া দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-ও। সুজয় ছাড়াও জেলাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন পেশ করতে জুনের সঙ্গে প্রবেশ করছিলেন রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ এবং জুনের ইলেকশন এজেন্ট সন্দীপ সিংহ। উল্লেখ্য যে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় জুনের ইলেকশন এজেন্ট ছিলেন বর্ষীয়ান প্রদ্যোৎ। তবে, সেবার জুনের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবও। এদিনও তিনি ছিলেন, তবে অনেকটাই ‘দূরে!’
মনোনয়ন পেশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জুন বলেন, “সুন্দর আবহাওয়া থেকে মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ- সবকিছুর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি ঈশ্বর-বিশ্বাসী। আর মানুষের উপর আস্থাশীল। বাকিটা আপনারাই বুঝে নিন ফলাফল কি হবে!” এদিকে, দুপুরে জুনের মনোনয়নের পরই সন্ধ্যা নাগাদ শহর মেদিনীপুরের বুকে নেমে এসেছে বহু প্রতীক্ষিত স্বস্তির বৃষ্টি। এটাও কি ‘কাকতালীয়’? জুন বলেন, “জানিনা! আমি ঈশ্বর বিশ্বাসী। আমার মন বলছে ৪ জুনও বৃষ্টি নামবে, মেদিনীপুরের বুকে!” বৃষ্টি হবে, ৪ জুন বর্ষাও আসবে। মনে করেন অগ্নিমিত্রাও। তিনি বলেন, “বর্ষা আসবে। আর সেটা মোদী জিকে তৃতীয়বারের জন্য দেশের সিংহাসনে স্বাগত জানিয়ে! মেদিনীপুরেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ের বৃষ্টি নামবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র কটাক্ষ, “আজকে মানুষের উচ্ছ্বাস আর আবেগ দেখে প্রকৃতিও নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। দুপুরে মেঘলা আবহাওয়া আর সন্ধ্যার পর বৃষ্টিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, ৪ জুন কি ফল হবে! বিজেপিও আজ বুঝে গেছে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ আর উচ্ছ্বাস কাকে বলে!” পাল্টা বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “তৃণমূলের জেলা সভাপতি ঠিকই বলেছেন, আজকের মিছিল দেখেই বোঝা গেছে কি হতে চলেছে! মেদিনীপুর শহরবাসী বলছেন, আজকেও ভালই লোক হয়েছিল, কিন্তু আপনাদের মিছিলের মতো তৃণমূলের মিছিলে সেই আবেগ আর উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়নি! আমরা বলছি, আসলে ওদের জোর করে ধরে আনা হয়েছিল, নানা ভয় দেখিয়ে। আর ওই মানুষগুলোকে বাঁচাতেই প্রকৃতি আজ বিরূপ হননি! সান্ত্বনা স্বরূপ প্রকৃতি ওদের একটু ছায়া প্রদান করেছেন। ‘অগ্নি’-ই যে মানুষের ‘মিত্র’, ৪ জুন তা প্রমাণ হবে। সমস্ত দুর্নীতি, অপশাসন ধুয়েমুছে নামবে শান্তি আর স্বচ্ছতার বারিধারা!”