দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ মার্চ: সেই ‘বসন্ত’ ছিল ২০২১-র ৭ মার্চ দুপুর। আর এ ‘বসন্ত’ ২০২৪-র ১১ মার্চ সন্ধ্যা। একই শাড়ি আর একই সাজে শহর মেদিনীপুরে জুন এলেন স্কুটি চেপেই। সময়-স্রোতে শুধু বদলে গিয়েছে ‘সারথি’! ঠিক ৩ বছর আগে চালকের আসনে ছিলেন যুব তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী (ছিলেন শহর যুব তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদকও) সুমন মুখার্জি! গতকাল (১১ মার্চ) সন্ধ্যাতেও সুমন মেদিনীপুর শহরেই ছিলেন। তবে, ‘কংগ্রেস’ ঘুরে সুমন এখন তৃণমূলের একজন সক্রিয় ‘সমর্থক’। তাই হয়তো সোম সন্ধ্যায় তাঁর ডাক পড়েনি! পরিবর্তে সার্কিট হাউস থেকে বেরিয়ে জুন তাঁর এক অনুরাগিনীর স্কুটি চেপেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শহর মেদিনীপুরের ফেডারেশন হলে। এবারও, প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির প্রতিকৃতিতে (এখন হয়েছে আবক্ষ মূর্তিও) মালা দিয়েই শুরু করলেন নির্বাচনী প্রচার। পরনে ছিল সেই একই শাড়ি! জুনের উত্তর, “হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। বিধানসভার প্রার্থী হয়ে প্রথম যেদিন (২০২১-র ৭ মার্চ) মেদিনীপুর শহরে পৌঁছেছিলাম, এই শাড়িটাই পরে এসেছিলাম। মনে হল, এবারও এটাই পরি!” তুকতাক মেনেই কি এবারও স্কুটিতে চাপা? হেসেছেন জুন! বলেছেন, “চাইব, সবকিছুরই পুনরাবৃত্তি হোক। বিধানসভার মতোই কঠিন লড়াই হবে নিঃসন্দেহে! তবে, এবারও শেষ হাসিটা আমিই হাসতে চাই!”
সেবার (বিধানসভায়) জুনের বিপক্ষে থাকা রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি শমিত দাশ সব শুনে মঙ্গলবার দুপুরে বললেন, “উনি তুকতাক করতেই পারেন। জয়ের আশাও করতে পারেন। তবে, সন্দেশখালি আর শিক্ষা, খাদ্য, আবাস, একশো দিনের কাজ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুরি ভুরি দুর্নীতি দেখার পর; মানুষ একই ভুল আর করবেন বলে মনে হয়না!” অন্যদিকে, তিন বছর আগে (২০২১) মেদিনীপুর বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া-কে এক ‘কঠিন’ লড়াইতে জিতিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন বিশ্বনাথ (মেদিনীপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব), সুজয় (জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা), প্রদ্যোৎ (তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ)-রা। এমনকি, সেবার ‘বিশু দা’র পাড়াতেই ফ্ল্যাট ভাড়াও নিয়েছিলেন জুন! সোমবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ফেডারেশন হলে অবশ্য এঁদের কাউকেই দেখা যায়নি! সুজয় অবশ্য সোমবার দুপুরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার (১৬ মার্চ) প্রস্তুতিতে এই মুহূর্তে বেলদায় আছি। আমরা ময়দানে নেমে পড়েছি! আমাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে এই আসন দিদি আর সেনাপতি-কে উপহার দিতে চাই!” কিন্তু, বিশু দা তো এখনও ‘অন্তরালে’? প্রসঙ্গ এড়িয়ে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জুন মালিয়ার উত্তর, “সৌমেন বাবু (মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান), অনিমা দি (ভাইস চেয়ারম্যান অনিমা সাহা), নির্মাল্য (যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তী)-রা আছে। আমাদের সব মেয়েরা এখানে আছে। বিকেলে (সোমবার বিকেলে) বেলদায় গিয়েছিলাম। সেখানে সুজয় (জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা) ছিল, সূর্য দা (নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট) ছিলেন।”
আর, সোম সন্ধ্যায় দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে না থাকা নিয়ে, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব ফোনে জানালেন, “আরে আপনারা এত গুজব ছড়াবেন না! আমি কলকাতায় আছি, চিকিৎসার কারণে। ব্রিগেডে এসে, মেয়ের বাড়িতে থেকে গেলাম। ভাবলাম একবার চেক-আপ’টা করিয়ে নি!” বিশ্বনাথ এও জানান, “উনি আমাদের দলের প্রার্থী। ওঁকে জেতাতে যা করার করব!” আপাতত সেই অপেক্ষাতেই মেদিনীপুরের আপামর তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। কিন্ত, জুন কি অপেক্ষায় আছেন? সোম সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জুন শুনিয়েছেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়েছি। আমরা সবাই একেকজন যোদ্ধা! এক ইঞ্চিও জায়গা ছেড়ে দেবনা।” ‘অন্তরালে’ থেকে ‘বিশু দা’ হয়তো সবই শুনেছেন! প্রচারে নামবেন কবে? এই প্রশ্নের উত্তরে মেদিনীপুর শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেছেন, “এখান থেকে গিয়েই নেমে পড়ব!”