দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ মার্চ: “মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক!” সেই কবে বলে গিয়েছেন রবি-কবি। তবে, এতদিন পর এর অর্থ কেউ বা কারা যে ‘এভাবে’ নিয়ে নিতে পারেন; তা বোধহয় ‘কবিগুরু’ স্বপ্নেও ভাবেননি! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের পঞ্চুরচকে অবস্থিত ‘কবিগুরু’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তিখানি দেখে অনেকটা এমনই মনে হতে বাধ্য। ইতিমধ্যে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন, তবে কি যোগদানের আবহে ‘বিশ্বকবি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শাসকদলে’ যোগ দিতে চলেছেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শহর মেদিনীপুরে ‘আগমন’ ঘিরে গোটা শহর ফ্লেক্স, হোর্ডিং, ব্যানার আর পতাকায় ঢেকেছে। বাদ যায়নি রবি ঠাকুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি সংলগ্ন নবনির্মিত সৌন্দর্যায়িত স্থানটিও! প্রায় রবি ঠাকুরের হাতেই ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল পতাকা! হাত দু’টি তাঁর পেছনে থাকার কারণে সেই সুযোগ হয়নি। তবে, গা ঘেঁষে থাকা (পৌরসভার উদ্যোগে নবনির্মিত) সিঁড়িতে এমনভাবে পতাকা বাঁধা হয়েছে, তাতে মনে হতে বাধ্য রবি ঠাকুর ‘ওই’ দলেরই লোক!

thebengalpost.net
রবিবার রাতে রবি ঠাকুরের মূর্তি (নিজস্ব চিত্র):

প্রসঙ্গত, আজ (৪ মার্চ) আর কয়েক ঘণ্টা পরই (দুপুরের পর) মেদিনীপুর শহরের ‘সার্কিট হাউস’ সংলগ্ন বিধান নগর মাঠে তৈরি অস্থায়ী হেলিপ্যাডে অবতরণ করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের প্রশাসনিক সভা থেকে প্রায় ৩৭৪-টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১১৯৩-টি প্রকল্পের শিলান্যাস করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগে গত কয়েকদিন ধরে তাঁর ছবি সহ বিভিন্ন ফ্লেক্স-হোর্ডিং দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে শহর মেদিনীপুর। সাজিয়ে তোলা হয়েছে রাস্তাঘাট থেকে মনীষীদের মূর্তি সংলগ্ন স্থানও। শহর মেদিনীপুরের পঞ্চুরচক এলাকায় ‘বিশ্বকবি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে সুবিশাল মূর্তি রয়েছে, সেই স্থানটিও লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সাজিয়ে তুলেছে মেদিনীপুর পৌরসভা। তৈরি করা হয়েছে নতুন সিঁড়ি। মূর্তিকে কেন্দ্র করে লোহার রেলিং বা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। আর সেই বেষ্টনীকে ঘিরে আকর্ষণীয় বাতিস্তম্ভও লাগানো হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু, সভাস্থলের (মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠের) অদূরেই ওই রবীন্দ্র-মূর্তিকে কেন্দ্র করে পৌরসভার নবনির্মিত ও সৌন্দর্যায়িত বেষ্ট নিকে যেভাবে ফ্লেক্স, ব্যানার আর পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়েছে; তাতে শুধু বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাই নয় সাধারণ শহরবাসীরাও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

thebengalpost.net
সোমবার সকালে রবি ঠাকুরের মূর্তি :

সিপিআইএম নেতা কুন্দন গোপ থেকে যুবনেতা সুব্রত চক্রবর্তী-রা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছেন। মন্তব্য করেছেন, “আমাদের সময়ই এই মূর্তি তৈরি হয়েছিল। তখন কিন্তু এই মূর্তির আশেপাশে আমরা কোন দলেরই পতাকা লাগাতে দিতাম না। সম্প্রতি মূর্তি সাজিয়েছে পৌরসভা। খুব ভালো উদ্যোগ। কিন্তু, তা বলে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও তৃণমূলের পতাকা দিয়ে মুড়ে দিতে হবে?” বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটূক্তি, “এরা বিবেকানন্দের মূর্তি ভাঙে, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তিতে কালি লাগায়। আর এই দলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, নেতাজি-রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দরও ঊর্ধ্বে তাঁদের দলের নেত্রী।” কংগ্রেসের জেলা যুব সভাপতি মহঃ সাইফুল বলেন, “এর আগে আমরা দেখেছি দিদির ছবির নীচে নেতাজির ছবি বা রবীন্দ্রনাথের ছবি। স্বাধীনতা দিবসের দিন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাশে ওঁদের দলনেত্রীর ছবি! এবার এটাও দেখতে হল।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, “দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সকাল থেকে রাত্রি অবধি ব্যস্ত থাকায়, এই বিষয়ে কিছু জানিনা। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে এ নিয়ে বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার মতো কারণ নেই। আমাদের দল ও মুখ্যমন্ত্রী মনীষীদের প্রকৃত অর্থেই সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। বিজেপির মতো মনীষীদের মূর্তি ভাঙেনা! এক্ষেত্রে কোন ভুল হলে নিশ্চয়ই শোধরানো হবে।” মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানও জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর গোচরে ছিলোনা! প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

thebengalpost.net
মূর্তি ঘিরে ব্যানার, পতাকা: