দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ ফেব্রুয়ারি: “যেতে নাহি দিব। হায়, তবু যেতে দিতে হয়!” সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সাত সকালেই মেদিনীপুর কলেজের (Midnapore College, Autonomous) বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে (WhatsApp Group) এই মেসেজটা দেখেই আঁতকে ওঠেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষাকর্মীরা! মেসেজের পরবর্তী লাইনগুলিতে লেখা- “আমাদের বন্ধু, সাথী, সহপাঠী শুভজিৎ দোলই দীর্ঘ ৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর, আজ সকালেই পাড়ি দিয়েছে না ফেরার দেশে! আমরা প্রথম থেকে যেভাবে ওর পাশে, ওর পরিবারের পাশে ছিলাম; সেভাবেই পরিবারের পাশে থাকবো।” শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষার্থীরা উপলব্ধি করলেন, সমস্ত লড়াই শেষ করে কলেজের নিউট্রিশন অনার্সের প্রথম বর্ষের (দ্বিতীয় সেমিস্টারের) ছাত্র শুভজিৎ দোলই ‘চির ঘুমের দেশে’ পাড়ি দিয়েছে! প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর চ্যাংশোলে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন বছর ১৮-র শুভজিৎ। সোমবার সাত সকালে সব লড়াই থেমে গেল কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের আইসিসিইউ-তে!

thebengalpost.net
শুক্রবার বিকেলে মেদিনীপুর কলেজে ছাত্রদের আন্দোলন ঘিরে উত্তেজনা :

কলেজের একটি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ (N.R.S Medical College)-র আইসিসিইউ (ICCU)-তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে কেশপুর এলাকার বাসিন্দা তথা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র শুভজিৎ দোলই। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫-টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুভজিৎ-কে NRS মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি শালবনীর চ্যাংশোলে ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনার পর থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যালের আইসিসিইউ (বা, ভেন্টিলেশন ওয়ার্ডে)-তে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল শুভজিৎ। শারীরিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার আগে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়া যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে; তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের বোঝানো হয়েছিল বলে জানা যায়। যদিও, উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই পরিবারের তরফে নিজেদের দায়িত্বে শুভজিৎ-কে শুক্রবার বিকেলে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। তবে, পরিবার ও কলেজের পড়ুয়ারা চেয়েছিলেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল বা মল্লিকবাজারের নিউরো সাইন্সে নামক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কিন্তু, তা সম্ভব হয়নি! শেষ পর্যন্ত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয় শুভজিৎ-কে। প্রথম থেকেই অবশ্য মেদিনীপুর কলেজের তরফে যথাসাধ্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে। কলেজের একটি সূত্রে এও দাবি করা হয়েছে, আজ (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলেই শুভজিতের মস্তিষ্কের অস্ত্রপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, সেই সময়টুকু আর পাওয়া গেলনা!

প্রসঙ্গত এও উল্লেখ্য যে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার মেদিনীপুর কলেজের দত্তক নেওয়া গ্রাম শালবনীর গোহালডিহিতে অবস্থিত গোয়ালডিহি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ চলছিল কলেজের একটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে। কলেজের অনুমতি নিয়েই সেখানে যোগ দিয়েছিল নিউট্রিশন বিভাগের পড়ুয়ারা। শুভজিৎ দোলই ও জিতেন্দ্রনাথ পাত্র নামে নিউট্রিশন অনার্সের প্রথম বর্ষের দুই ছাত্র একটি বাইকে করে পিড়াকাটার দিক থেকে গোহালডিহির দিকে আসার পথে মৌপাল সংলগ্ন চ্যাংশোল এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে! একটি বাসের সঙ্গে তাদের বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় বলে জানা গেছে। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে দুই ছাত্র। রীতিমত আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়দের সহায়তায় দুই পড়ুয়াকে উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের তরফে। মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় ICU-তে ভর্তি করা হয়েছিল শুভজিৎ দোলই-কে। তারপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই সংকটজনক হয়েছে! মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরফে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। জানা যায়, একপ্রকার কোমায় চলে গিয়েছিল শুভজিৎ। সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অস্ত্রপচার ছাড়া কোন উপায় ছিল না! নিউরো সার্জারি বিভাগ না থাকায়, তা সম্ভব ছিলনা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। তাই, ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে জানা সত্ত্বেও শুভজিৎ-কে কলকাতায় স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল পরিবারের তরফে। এজন্য মেদিনীপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতা’র দাবি করে গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কলেজ চত্তর উত্তাল হয়েছিল সহপাঠীদের আন্দোলনে! শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় শুভজিৎ-কে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে সোমবার সাত সকালেই সকলের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলো! না ফেরার দেশে পাড়ি দিল শুভজিৎ! জানা গেছে, শুভজিতের বাড়িতে বাবা-মা ও দিদি আছেন। মা আর দিদি সংজ্ঞা হারাচ্ছেন বারবার! কলেজ কর্তৃপক্ষ, ছাত্র-ছাত্রী ও সহপাঠীদের তরফে শুভজিতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর সাথে সাথেই পাশে থাকার অঙ্গীকার করা হয়েছে। (সোমবার সকালে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়ার পর, যথাসাধ্য সঠিক তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। তা সত্ত্বেও তথ্যগত কোনও ত্রুটি আছে মনে হলে 8250424429/9732229031 নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।)

thebengalpost.net
গত সোমবার শালবনীর চ্যাংশোলে ঘটে দুর্ঘটনা :