মণিরাজ ঘোষ ও শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি: প্রাথমিকভাবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের তত্ত্ব উঠে এলেও, পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার নুতনবাজারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সেখ আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী-র খুনের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের পর উঠে আসছে মূলত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টিই। আর সেই রহস্যের কিনারা করতে পুলিশের অন্যতম ‘অস্ত্র’ নাকি হতে চলেছে মূল অভিযুক্ত ঝাড়েশ্বরের একটি ডায়েরিই! উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৬ নং জাতীয় সড়কের পাশে ডেবরার নুতনবাজার সংলগ্ন ভগবানবসান এলাকায় নিজের বাড়িতে বা চেম্বারে বছর ৫৫-র হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সেখ আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী রূপসারা বিবি (ওরফে হীরা বিবি) খুন হন। আর সেই খুনের ঘটনায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ধৃতরা হল যথাক্রমে ঝাড়েশ্বর সাউ ও গৌতম মাহাত (বান্টি)।
ধৃত ঝাড়েশ্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুরের বাসিন্দা। গৌতম (বান্টি) আদতে বর্ধমানের বাসিন্দা হলেও গত কয়েক বছর ধরে খড়্গপুর শহরে থাকত বলে জানা গেছে। খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অবশ্য বছর ৩৫-র ঝাড়েশ্বরই। গৌতম ওরফে বান্টি ঝাড়েশ্বরের বন্ধু বলে জানা গেছে। ধৃত দুই যুবকের বিরুদ্ধেই ৩০২ ধারায় (ইচ্ছাকৃতভাবে খুন বা হত্যার অভিযোগ) মামলা রুজু করে বুধবার দুপুরে মেদিনীপুর আদালতে তুলেছিল ডেবরা থানার পুলিশ। এই জোড়া খুন বা হত্যার কিনারা করতে ধৃত দুই যুবককেই ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। মেদিনীপুর CJM আদালতের বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। বুধবার বিকেলে এমনটাই জানিয়েছেন সরকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব। তবে, খুনের মোটিভ বা কারণ সম্পর্কে এখনো পুলিশ বা আইনজীবীদের তরফে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি। যদিও ঘটনাস্থল থেকে যেমন দুষ্কৃতীদের একটি বাইক উদ্ধার হয়, ঠিক তেমনই ঝাড়েশ্বরের কাছ থেকে পুলিশ একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর। সেই ডায়েরিতেই নাকি ডেবরার ওই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সেখ আলাউদ্দিনের সঙ্গে ঝড়েশ্বরের কিছু আর্থিক লেনদেনের বিষয় উঠে এসেছে।
এও জানা গেছে, কেশপুরের যুবক ঝাড়েশ্বর পেশায় কোন একটি জীবনবীমা কোম্পানি বা অর্থ বিনিয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত ছিল। সঙ্গে টুকটাক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও নাকি করত। সেই সূত্রেই সেখ আলাউদ্দিনের সঙ্গে তার পরিচয় এবং আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে সূত্রের খবর। কাজেই এই খুনের পেছনে আর্থিক লেনদেনের কোনো বিষয় আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যদিও, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা অন্য কোন বিষয়কেও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না এখনই! উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভর সন্ধ্যায় নিজের চেম্বার বা বাড়ি থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সেখ আলাউদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী-র রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁদের গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ ছিল! দ্রুত এলাকায় লোকজন জমে যাওয়ায়, নিজেদের বাইকটি ছেড়ে দিয়েই পালিয়ে গিয়েছিল দুই দুষ্কৃতী। সেই সূত্র ধরেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেলার একটি প্রান্ত থেকে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার তাদের আদালতে তোলা হয় এবং মৃতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। মৃত দম্পতির ছেলে কর্মসূত্রে কেরালায় থাকেন। খবর পেয়েই তিনি রওনা দিয়েছেন। মেয়ে পড়াশোনার সূত্রে মেদিনীপুর শহরের মেসে থাকতেন। তিনি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছনোর পরই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন! অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে ডেবরাবাসী। খুনিদের নজিরবিহীন শাস্তির দাবিতে বুধবার বিকেলে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্রুত এই খুনের কিনারা করা হবে।