দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জানুয়ারি: নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। প্রায় প্রতিদিন আদালতে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে পর্ষদ কিংবা কমিশনকে! এই পরিস্থিতিতেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত বা ‘কালা সার্কুলার’-র বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন রাজ্যের প্রধান শিক্ষকরা। “মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড (Admit Card) তুলতে হবে নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে প্রধান শিক্ষকদের মুচলেকা দিয়ে”- মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এমনই এক সার্কুলারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে, হতাশায় ফেটে পড়েছেন দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ গোটা রাজ্যের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁদের সংগঠন ASFHM (অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার এন্ড হেড মিস্ট্রেস)-র উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিভিন্ন জেলার সাথে সাথে মেদিনীপুরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আঞ্চলিক অফিসেও ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের কেরানীটোলাতে অবস্থিত পর্ষদের আঞ্চলিক অফিসের সামনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তুঘলকি সিদ্ধান্ত বা কালা সার্কুলারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন পশ্চিম মেদিনীপুর সহ ৫-টি জেলার (পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া) প্রধান শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি, অতীতে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। প্রধান শিক্ষকদের নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে মুচলেকা দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত অবমাননাকর! তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, পর্ষদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকদের সম্পর্ক কি এমন জায়গায় পৌঁছে গেল, যেখানে পড়ুয়াদের এডমিট কার্ড তোলার জন্য তাঁদের মুচলেকা দিতে হবে?
প্রসঙ্গত, এবারের (২০২৪-র) মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২০২২ সালে। অথচ, প্রধান শিক্ষকদের ‘মুচলেকা’-তে লিখতে হবে- “২০২৩ সালে আর কোন পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন বাকি নেই!” এই বিষয়েই ASFHM-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সভাপতি ড. অমিতেশ চৌধুরী বলেন, “প্রথমত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাস-ফেল না থাকায়, নবম শ্রেণীতে স্বাভাবিক নিয়মেই পড়ুয়াদের নাম উঠে যায় বাংলার শিক্ষা পোর্টালে। কিন্তু, এদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ক্লাসে ড্রপ-আউট হয়ে যায়; তা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষকরা চেষ্টা করেন সর্বাধিক সংখ্যক পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন করাতে। আর, তাছাড়াও এই পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২০২২ সালে। কাজেই এই মুচলেকার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছিনা! দ্বিতীয়ত, কোনো মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনে সমস্যা থাকলেও, গত বছর পর্যন্ত আমরা পর্ষদের সহযোগিতা পেয়ে এসেছি। জানিনা এবার তারা কি চাইছে! সর্বোপরি, এতদিন অবধি প্রধান শিক্ষকদের যা কিছু লিখে দিতে হয়েছে তা তাঁদের নিজস্ব প্যাডে এবং স্বাক্ষর সম্বলিত স্ট্যাম্প সহকারে। কিন্তু, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপারে এই প্রথম! এটা আমাদের কাছে অপমানজনক। এটা আমরা মেনে নিতে পারিনা। তাই এই প্রতিবাদ।” তাঁর সংযোজন, “প্রতিটি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর হাতে অ্যাডমিট কার্ড তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পর্ষদের। আমরা মুচলেকা দিয়ে অ্যাডমিট কার্ড তুলতে পারবনা!” এ নিয়েই ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, “তবে কি আদালতে বিভিন্ন কারণে ভর্ৎসিত পর্ষদ এবার নিজেদের নানা ভুলের দায় প্রধান শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপানোর জন্যই এই ‘মুচলেকা’ ব্যবস্থা আনতে চাইছে?”