দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ ডিসেম্বর: ২৫ আসন বিশিষ্ট মেদিনীপুর পৌরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর ২০ জন। বাকি ৩ জন সিপিআইএমের; ১ জন কংগ্রেস এবং ১ জন নির্দল কাউন্সিলর। তৃণমূলের তরফে চেয়ারম্যান পদে আছেন মেদিনীপুর সদরের বিধায়ক জুন মালিয়া ঘনিষ্ঠ সৌমেন খান। এদিকে, বাকি ১৯ জন (তৃণমূলের)-র মধ্যে ১১-৮ এ আড়াআড়ি ‘বিভাজন’ প্রথম থেকেই। সবমিলিয়ে জুন-সৌমেন গোষ্ঠীতে ৯ জন। অপরদিকে, তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি তথা ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব সহ বাকি ১১ জন আবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-র অনুগামী। বুধবার তাঁরাই জুন-ঘনিষ্ঠ চেয়ারম্যান সৌমেন খানের পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে পৌরসভার সামনে প্রতিবাদ অবস্থানে বসেন। বিশ্বনাথ পাণ্ডব, মৌ রায়, মৌসুমী হাজরা-দের বক্তব্য, চেয়ারম্যান গুটিকয়েক কাউন্সিলরকে নিয়ে চলছেন। তাঁর ‘বিমাতৃসুলভ’ আচরণের প্রতিবাদেই তাই ফের তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভে বসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান ইন্দ্রজিৎ পানিগ্রাহী, মোজাম্মেল হোসেন, লিপি বিষই, গোলোক বিহারী মাঝিরাও! বিকেল ৪-টা নাগাদ রাজ্য নেতৃত্বে তরফে বার্তা পৌঁছানোর পর অবশ্য তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে নেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বছরখানেক আগেও দলেরই চেয়ারম্যান সৌমেন খানের বিরুদ্ধে ঠিক একইভাবে ‘সহযোগিতা’ না পাওয়ার অভিযোগে, প্রতিবাদ-অবস্থানে বসেছিলেন দলের ১১ জন কাউন্সিলর। তবে, সেবার সরাসরি ‘পদত্যাগ’ বা ‘অপসারণ’ চাওয়া হয়নি। এদিন অবশ্য চেয়ারম্যানের পক্ষপাতদুষ্ট বা বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রতিবাদে সরাসরি পদত্যাগ চাওয়া হয়! দলের ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌসুমী হাজরা বলেন, “আমরা একমাত্র মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আর আমাদেরকে মানুষের (ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের) কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওনার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কাউন্সিলরের ওয়ার্ডে অবশ্য কাজ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন! আমরা কি উত্তর দেব? তাঁরাই তো আমাদের জনপ্রতিনিধি করেছেন। শুধু তাই নয়, মানুষের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকায়, মানুষকে পরিষেবা না দিয়ে উনি যা কিছু করছেন; আমরা শহরবাসীর সেই সব প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছি না। শহরবাসীর স্বার্থে এরকম চেয়ারম্যান না থাকাই ভালো!” তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা ১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, “চেয়ারম্যান পক্ষপাতদুষ্ট। উনি আমাদের দলেরই চেয়ারম্যান, তবুও আমরা তার পদত্যাগ চাইছি; এটা সত্যিই লজ্জার! কিন্তু, আমরা বাধ্য হয়েই এটা করছি। এক বছর আগেও যখন ওঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বসেছিলাম, তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। আমাদের ওয়ার্ডে কাজ করার জন্য ফান্ড দেওয়া হচ্ছেনা, আমাদের সাথে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না; কয়েকজন কাউন্সিলর-কে নিয়ে উনি চলছেন।”
এদিকে, এই আন্দোলনের পরেই খবর পৌঁছে যায় জেলা নেতৃত্ব ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এদিন দুপুরে তাঁর কর্মসূচির মাঝেই ফোনে জানিয়েছিলেন, “আমাদের দলেরই চেয়ারম্যানের বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রতিবাদে আমাদের দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলররা এক বছর আগেও আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আমি তখনও শীর্ষ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ওঁরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কিন্তু, সেই মানুষের জন্যই কাজ করতে পারছেন না অভিযোগ তুলে এবারও তাঁরা অবস্থানে বসেছেন। আমার কাছেও বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি নিশ্চয়ই শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাব।” অন্যদিকে, বিকেল সাড়ে ৩-টা নাগাদ রাজ্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে মেদিনীপুর পৌরসভায় পৌঁছন দলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ। তিনি দলের ‘প্রতিবাদী’ কাউন্সিলরদের বলেন, আগামী ২ জানুয়ারি রাজ্য নেতৃত্ব কলকাতায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসবেন। সেখানে কাউন্সিলরদেরও ডাকা হবে। তারপরই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন অবস্থানরত কাউন্সিলররা। প্রদ্যোৎ জানান, “যাঁরা আন্দোলন করছিলেন, তাঁরাও আমাদের দলের কাউন্সিলর; যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিও আমাদের দলেরই চেয়ারম্যান। দলেরই চেয়ারম্যান সহযোগিতা করছেন না, এই অভিযোগে ওঁরা অবস্থানে বসেছিলেন। তাই রাজ্য নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হল। ওঁদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে।” এদিকে, সব দেখেশুনে বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, “পৌরবাসী পরিষেবা পাচ্ছেন না, কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় আবাসের বাড়ি পাচ্ছেন না; আর ওদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে খাওয়াখায়ী বা বখরা ভাগ নিয়ে লড়াই চলছে!”