দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ ডিসেম্বর: সার্জারি বিভাগের ভুলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল কিশোরী! অভিযোগ এমনটাই। ক্ষোভে ফুঁসছেন শহরবাসী। মেদিনীপুর শহরের (শহর লাগোয়া ঝর্ণাডাঙা বা কালগাঙ-র) বছর ১৩-র কিশোরীর মৃত্যুতে এক প্রকার ‘চাপে পড়ে’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের সার্জারি বিভাগের কাছে ‘লিখিত রিপোর্ট’ চেয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সার্জারি বিভাগের তরফে ডঃ এস. এন ত্রিপাঠী (সমরেন্দ্র নাথ ত্রিপাঠী) সেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন হাসপাতাল সুপার ডঃ জয়ন্ত রাউতের কাছে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে বা সার্জারি বিভাগের বিরুদ্ধে! ‘অভিযুক্ত’ চিকিৎসক বললেন, “যা জানানোর লিখিত রিপোর্ট আকারে MSVP (হাসপাতাল সুপারিনটেনডেন্ট/ভাইস প্রিন্সিপাল)-র কাছে জমা দিয়েছি। আমি কোনো মন্তব্য করবনা।”
সোমবার সাংবাদিকদের তরফে সার্জারি বিভাগের অভিযুক্ত চিকিৎসককে এও প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাঁরা (মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা) হাসপাতালে সময় না দিয়ে, প্রাইভেট প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় দেন কেন? চিকিৎসক জানিয়েছেন, “অভিযোগ করা যেতেই পারে! কিন্তু, তা সঠিক কিনা কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে।” তবে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সহ পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ বরাবরের। হাতে গোনা কিছু চিকিৎসক ছাড়া প্রায় সকলেই ‘অতিরিক্ত অর্থ’ রোজগারে ব্যস্ত! মেদিনীপুর মেডিক্যালের যে কয়েকটি বিভাগ সঠিক নিয়ম মেনে চলে, তার মধ্যেই একটি বিভাগের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে জানান, “বিভাগীয় প্রধান সহ কর্তৃপক্ষের আরো কড়া হওয়া প্রয়োজন। তবেই সরকারি হাসপাতালে সঠিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব। আর, এখনকার চিকিৎসকদেরও অতিরিক্ত অর্থ রোজগারের মানসিকতা ত্যাগ করে, হাসপাতালে আসা অসহায় মানুষজনদের পরিষেবা দেওয়া উচিত। নিজেদের কর্তব্য পালন করা উচিত।”
অন্যদিকে, সোমবার বিকেলে মেদিনীপুর শহর লাগোয়া এলাকার (ঝর্ণাডাঙা বা কালগাঙ-র) বাসিন্দা গোবিন্দ রায় ও রিঙ্কু রায়ের বছর তেরোর কন্যা সুপ্রিয়া রায়ের দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তরফে। সেই সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা হাসপাতালের রোগী সহায়তা কেন্দ্রের সম্পাদক সুজয় হাজরা, বিধায়ক দীনেন রায়, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান, কোতোয়ালি থানার আই.সি আতিবুর রহমান প্রমুখ। সুজয় বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা! চিকিৎসায় যদি কোথাও ভুল হয়ে থাকে, সেটা তদন্ত হবে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারও তৎপর। আমরা ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফির দাবি করেছিলাম। তা করা হয়েছে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হবে।” সুজয় এও বলেন, “প্রথম থেকেই মেয়টির পরিবারের পাশে আছি। শেষপর্যন্ত থাকবো। মেয়েটির আরো দু’টি বোন আছে। তার মধ্যে একজন বিশেষভাবে সক্ষম। তার উপযুক্ত চিকিৎসার বিষয়েও আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।” অন্যদিকে, শাসকদল সহ পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে তদন্ত ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার মারাত্মক অভিযোগ এনেছেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত সহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও, সেই অভিযোগ যে সত্যি নয়, তা জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদরী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। তবে, আদৌ কি ‘তদন্ত’ শেষ হবে? এই শেষটাই দেখতে চান শহরবাসী!