দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ নভেম্বর: ইতিহাস প্রসিদ্ধ শহর মেদিনীপুরে রয়েছে একাধিক সুপ্রসিদ্ধ কালী মন্দির। কয়েক শতাব্দী প্রাচীন সেই সব মন্দিরের সঙ্গেই পারিবারিক বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যমন্ডিত পুজোও এই শহরের কালীপুজোর প্রধান আকর্ষণ। অনেক পুজোর শুরুর সময়কাল বর্তমান প্রজন্মের মনে না থাকলেও, সেই প্রাচীন রীতি মেনেই পুজো হয় আজও। তেমনই এক পুজো মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের লচি পোদ্দার কালীবাড়ির পুজো। যেখানে প্রতিমা বিসর্জনের সময় আজও ব্যবহার করা হয় গোরুর গাড়ি। গোরুর গাড়িতে চেপে নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বের হন লচি পোদ্দার কালীবাড়ির মা। এই পুজো শুরুর ইতিহাসও রীতিমত রোমহর্ষক। মায়ের পায়ের নুপুরের শব্দ (নিক্কন) যেখানে থামবে, সেখানেই হবে মন্দির”! কথিত আছে, পুজোর প্রতিষ্ঠাতা লক্ষ্মী নারায়ণ দে প্রায় চারশ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পান, এই পুজোর সূচনা করার বিষয়ে। দিন কয়েক পরেই মধ্যরাতে লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র কানে ভেসে আসে নুপুর পরিহিতা এক মহিলার বাড়ির মধ্যে সশব্দ বিচরণের আওয়াজ। স্বপ্নাদেশে বলা হয়, নুপুরের শব্দ (নিক্কন) যেখানে থামবে, সেখানে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আদেশ অনুয়ায়ী সুচনা হয় এই বাড়ির কালীপুজোর।
তবে, লচি পোদ্দার নাম হয় লক্ষ্মী নারায়ণ দে’র নামের অংশ থেকেই। লক্ষ্মী থেকে ‘লছমি’ আর লছমি থেকে ‘লচি’। তিনি পেশায় ছিলেন ‘পোদ্দার’। তাই তাঁর নাম থেকেই পুজোর নাম হয়, লচি পোদ্দার কালী বাড়ির পুজো। এই পুজো ঘিরে শহরবাসীর মধ্যে আজও এক অন্যরকম আবেগ কাজ করে। প্রতমা নিরঞ্জন হয় গোরুর গাড়িতে চেপে। যা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন শহরবাসী! শহরের হবিবপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পিছনেও রয়েছে পাঁচশ বছরের ইতিহাস! তখন হবিবপুর ছিল জঙ্গলে ভর্তি। এই এলাকায় শ্মশান ছিল। কালীমন্দির সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় পাঁচশ বছর আগে রঘুনন্দন দীর্ঘাঙ্গি নামে এক বৈষ্ণব সাধু স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে অষ্টধাতুর বামকালীর বিগ্রহ তুলে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বৈষ্ণব হওয়ায় মায়ের পুজোর জন্য কালিকারঞ্জন মহারাজ নামে একজনকে পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। সেই থেকে পুজো হয়ে আসছে আজও। প্রতি ১২ বছর অন্তর মায়ের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে পুজো করা হয়।
বটতলাচক দক্ষিণাকালী মন্দিরের (অলিগঞ্জ) কালীপুজোরও সুন্দর ইতিহাস রয়েছে। কথিত আছে, এক তান্ত্রিক বা সাধু পুরী ধামে যাওয়ার পথে গাছগাছালিতে ভরা বটতলা চকে আশ্রয় নেন। তিনিই টিনের চালা দেওয়া ঘরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বর্তমান মন্দির তৈরি হয়। প্রতি মঙ্গল ও শনিবার দূর-দূরান্ত থেকে বহু ভক্ত মনোস্কামনা পূরণের জন্য এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। এখানে, কালীপুজোর পরদিন অন্নকূট উৎসব হয়। অন্যদিকে, মীরবাজার কাঁথকালী বিগ্রহ প্রায় চারশো বছরের পুরানো। কথিত আছে, ডায়মন্ডহারবারের বাসিন্দা নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে মেদিনীপুরে আসেন। তবে, প্রথমে তিনি এসে বিগ্রহ খুঁজে পাননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি বটগাছের পাশে দেওয়াল ভেঙে স্বস্তিকচিহ্ন দেখেন। পরে, মায়ের বিগ্রহের হদিশ পান। সেই সময় তিনি টিনের চালের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে পুজো হয়ে আসছে। নিয়ম করে ফি বছর মায়ের জন্য দু’কুইন্টাল চালের ভোগ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।