দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ নভেম্বর: ১৯৩১ থেকে ১৯৩৩। পর পর তিন বছর তিন অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসক-কে নিধন করেছিলেন মেদিনীপুর শহরের বিপ্লবীরা। ‘৩১ এ (৭ এপ্রিল) পেডি। ‘৩২ এ (৩০ এপ্রিল) ডগলাস। আর, ‘৩৩ এ (২ সেপ্টেম্বর) বার্জ। অগ্নিযুগের জ্বলন্ত সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘আঁতুড়ঘর’ মেদিনীপুরে ঠিক এভাবেই শহীদ ক্ষুদিরামের আত্মাহুতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত, প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত-রা। মেদিনীপুর শহরের যে সমস্ত এলাকায় এই বিপ্লবীদের গোপন কর্মকাণ্ড চলত তার মধ্যেই অন্যতম কর্নেলগোলা সংলগ্ন লালদীঘি পূর্বপাড়া। পুকুরের পাড়েই আছে দেড়শ বছরের পুরানো শ্যাওড়া গাছ। কথিত, এই গাছের তলায় চলত বিপ্লবীদের গোপন অস্ত্র-প্রশিক্ষণ। আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে সেই শ্যাওড়া গাছের তলাতেই পুজো শুরু করেছিলেন পেডি আর ভিলিয়ার্স হত্যার ‘নায়ক’ বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত। ১৯৪২ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কিষাণ সাহা প্রমুখ-কে নিয়ে ১৯৪৩ সালে দীপান্বিতা অমাবস্য-তে তিনি শুরু করেছিলেন কালীপুজো। পরবর্তী সময়ে এই পুজোতে যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য বিপ্লবীরাও।
পুজোর রীতি অনুযায়ী, অমাবস্যা শুরু হলে নিয়ে আসা হতো ছোট প্রতিমা। অমাবস্যা শেষ হওয়ার আগেই পুজো সম্পন্ন করে, লালদীঘি পুকুরে সেই প্রতিমা নিরঞ্জন করে দেওয়া হতো। আজও রীতি মেনে এলাকার বাসিন্দারা সেই পুজো করে চলেছেন। সুপ্রাচীন শ্যাওড়া গাছের তলায় বাঁধানো ছোটো মণ্ডপে, অমাবস্যা তিথিতে পুজো হয়। আবার, অমাবস্যা কাটার আগেই বিসর্জন হয়ে যায় প্রতিমা-র। বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তদের পরে স্থানীয় নিতাই জেলে নামে এক ব্যক্তির উদ্যোগে পুজো হতো। বর্তমান পুজো কমিটির সম্পাদক অনুপ সাউ বলেন, “আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বলে গেছেন পুজোর দিনটুকু ছাড়া সারা বছর পুজোর স্থান অন্ধকার করে রাখতে হবে। মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালানো যাবে, কিন্তু ইলেকট্রিকের বাতি বা বেশি আলো ব্যবহার করা যাবে না। সেই নিয়ম মেনেই আমরা আজও পুজো করি। তবে, এই এলাকাটি দারিদ্র্যপূর্ণ ও আদিবাসী অধ্যুষিত। তাই, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটু নজর দিলে বিপ্লবীদের স্মৃতি-বিজড়িত এই পুজো আরো সুন্দরভাবে আমরা করতে পারব।” (Edited by Maniraj Ghosh)