দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর: গত ৩০ আগস্ট সাত সকালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুর সংলগ্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক গলা-কাটা যুবতীর রক্তাক্ত মৃতদেহ। পরনের পোশাক-আশাক থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল, বছর ৩০’র তরুণী কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারেরই সদস্য ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে এও বোঝা গিয়েছিল, ‘অবৈধ সম্পর্ক’ বা সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণেই অজ্ঞাত পরিচয় ওই তরুণী-কে ভোররাতে নির্জন ওই গ্রামীন রাস্তায় খুন করা হয়েছিল বা অন্য কোথাও খুন করে সেখানে এনে ফেলা হয়েছিল! ঘটনার ১৩ দিন পর অর্থাৎ গতকাল, বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর), সেই খুনের প্রাথমিক-কিনারা করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মহিলার নাম-পরিচয় উদ্ধার করার সাথে সাথেই, গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ‘খুনি’-কেও! ঘটনায় পুলিশ তথা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রাথমিক অনুমানও ‘সত্য’ বলে প্রমাণিত হতে চলেছে। উঠে এসেছে অবৈধ সম্পর্ক বা প্রেম ও পরকীয়ার তত্ত্ব!
বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানার লোয়াদা থেকে ওই মহিলার ‘প্রেমিক’ তথা ‘খুনি’-কে গ্রেফতার করেছে ঘাটাল মহকুমা পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম সৌরভ বেহারা। বছর ৩০-র যুবকের বাড়ি চন্দ্রকোনা থানার বালা এলাকায়। পুলিশের প্রাথমিক জেরায় সে স্বীকার করেছে, নিজের মামিমা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই ‘খুন’ করেছে ওই তরুণী-কে। পুলিশ জানতে পেরেছেন, মৃত মহিলার নাম শ্রীমতি বর্মণ। তিনি উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদের বাসিন্দা। ২-৩ বছর আগে তাঁর স্বামী মারা যান। ইদানীং তিনি রায়গঞ্জে থাকতেন বলেও মহকুমা পুলিশ জানতে পেরেছে। বছর ৩০-র শ্রীমতি’র সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার বালা এলাকার বাসিন্দা সৌরভ বেহারা-র। অভিযোগ, শ্রীমতি বর্মণের আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারণেই ‘বিবাহিত’ ও এক সন্তানের বাবা হওয়া সত্ত্বেও; সৌরভ ভালবাসার ‘অভিনয়’ চালিয়ে যায় এবং ধাপে ধাপে বহু টাকা ধার নেয় তাঁর কাছ থেকে। টাকার অংক লক্ষাধিক ছাড়িয়ে গেছে বলেও পুলিশের একটি সূত্রে অনুমান করা হচ্ছে। এরপর, ওই মহিলার চাপে বছরখানেক আগে কোন এক মন্দিরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে বিয়েও করে সৌরভ। তবে, গত কয়েক মাস ধরে ওই মহিলা সৌরভকে আইনি বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে বলে সূত্রের খবর। আর, গন্ডগোলের সূত্রপাত এখানেই! ‘আপদ’ বিদায় করার চক্রান্ত শুরু করে সৌরভ। দেখা করার নামে চন্দ্রকোনা এলাকায় ডেকে, গত ৩০ আগস্ট তাঁকে খুন করা হয় বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। যদিও, ক্যামেরার সামনে সৌরভ নিজেই স্বীকার করেছে তার মামিমা ও ভাইকে সঙ্গে নিয়ে সেই ‘খুন’ করেছে। পুলিশ ওই যুবককে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। ঘটনায় সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) অগ্নিশ্বর চৌধুরী।