দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ আগস্ট: দলবিরোধী কাজকর্ম করায় পঞ্চায়েত ভোটের আগেও দলের একাধিক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। এবার, ভোটের ফলাফলের পর গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করায় কড়া শাস্তির মুখে পড়লেন মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের দুই দাপুটে নেতা। মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা জানান, দলবিরোধী কাজ করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা তথা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ফটিক রঞ্জন পাহাড়ি-কে। একই সাথে শোকজ করা হয়েছে জঙ্গলমহল শালবনী ব্লকের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি আব্দুল কাশেম খানকে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিভিন্নভাবে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে, দল-বিরোধী কাজ করেছেন তাঁরা। বারবার দলের তরফে সচেতন করা সত্ত্বেও নিজেদের পরিবর্তন না করায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে জেলার সাধারণ সম্পাদক ফটিক রঞ্জন পাহাড়িকে। অপরদিকে, শোকজ করা হয়েছে অন্যতম সহ-সভাপতি আব্দুল কাশেম খানকে। তিনদিনের মধ্যে সন্তোষজনক উত্তর না পেলে, তাঁকেও অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেশিয়াড়িতে চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হয়নি। আপাতত তা স্থগিত হয়ে গেছে! দলের তরফে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নাম পাঠানো হয়েছিল উত্তম শিটের। কিন্তু, দলীয় নির্দেশ অমান্য করে সভাপতি হতে চেয়েছিলেন ফটিক রঞ্জন পাহাড়ি। ফলে, বোর্ড গঠন স্থগিত হয়ে যায় নির্ধারিত ১০ আগস্ট। অন্যদিকে, শালবনীর ১ নম্বর দেবগ্রাম অঞ্চলে দলের তরফে প্রধান হিসেবে নাম পাঠানো হয়েছিল লালমোহন মাহাতোর। কিন্তু, স্থানীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ভোটাভুটিতে প্রধান হন সৈয়দ তাজেমুল হক। লালমোহন-কে করা হয় উপপ্রধান। এজন্য, এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির বিজয়ী প্রার্থী তথা জেলা ও ব্লকের সহ-সভাপতি আব্দুল কাশেম খানের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ পায় দল। এই বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জেলা সভাপতি বলেন, “দলীয় নির্দেশ বা গাইডলাইন অমান্য করার অভিযোগ ছিল ওঁদের বিরুদ্ধে। সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা গত কয়েক মাস ধরে কেশিয়াড়িতে দিনরাত পরিশ্রম করে ভালো ফলাফল করেছিলাম। পাঁচ বছর পর কেশিয়াড়িতে উন্নয়নের আশায় এলাকার বাসিন্দারা আমাদের প্রার্থীদের দু’হাত তুলে আশীর্বাদও করেছেন। কিন্তু, পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে ঘিরে ওখানে যা হয়েছে, তাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চরম ক্ষুব্ধ। তাই, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ফটিক রঞ্জন পাহাড়িকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। একইভাবে শালবনীতেও দলীয় নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। তাই, শালবনী ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি আব্দুল কাসেম খানকে শো-কজ করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে সন্তোষজনক উত্তর না পেলে, ওনাকেও অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হতে পারে।” এই বিষয়ে, দুই নেতার কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও, ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা জানিয়েছেন, দলের চিঠি হাতে পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব তথা জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন।