দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৩ আগস্ট: যাদবপুরের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুন্ডুর মৃত্যু-রহস্যের তদন্ত করতে গিয়ে রবিবার সকালে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। শনিবার রাত থেকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বাঁকুড়ার দীপশেখর দত্ত এবং হুগলির মনোতোষ ঘোষ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। এর আগে, শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছিল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্র স্বপ্নদীপের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ‘মূল অভিযুক্ত’ সৌরভ চৌধুরী-কে। সৌরভের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা (চন্দ্রকোনা-২ নং ব্লক)-র খারুষা গ্রামে। যাদবপুরের অঙ্ক বা গণিত বিভাগের (Mathematics Department) প্রাক্তন ছাত্র (২০২২ সালে M.Sc পাস) সৌরভ-ই হস্টেলের ওই ব্লকের ‘র‌্যাগিং’ চক্রের মূল পাণ্ডা বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পেরেছে পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে (২২ আগস্ট পর্যন্ত) থাকা সৌরভ-কে জিজ্ঞাসাবাদ করেই তার ঘনিষ্ঠ ‘বর্তমান’ দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্বপ্নদীপের ওপর র‌্যাগিং বা মানসিক অত্যাচার চালানোর ঘটনায় এই দুই ছাত্র যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে।

thebengalpost.net
স্বপ্নদীপ কুন্ডু (ফাইল ছবি):

জানা গেছে, ধৃত দুই ছাত্রের মধ্যে দীপশেখর দত্ত’র বাড়ি বাঁকুড়ার মাচনতলা এলাকার ফেমাস গলিতে। অন্যদিকে, মনোতোষ ঘোষের বাড়ি হুগলির আরমবাগে। রাতভর দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ভোররাতে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বছর ১৯-র দীপশেখর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মনোতোষ হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা। বয়স ২০ বছর। তিনি সমাজবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকেন তিনি। মনোতোষের ‘অতিথি’ (Guest) হিসাবেই স্বপ্নদীপ-কে হস্টেল রেখেছিলেন সৌরভ। মনোতোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুন্ডু’রও। জানা যায়, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দীপশেখর এবং মনোতোষ দু’জনই আর্টসের ছাত্র সংগঠন ‘ফোরাম ফর আর্টস স্টুটেন্ডস’ (FAS) এর সক্রিয় সদস্য। আজ (রবিবার) দুপুরেই দু’জনকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে। সকাল থেকে তাদের রাখা হয়েছে লালবাজারে।

দীপশেখরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাঁকুড়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দীপশেখর পড়াশোনা করে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর গত বছরই অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীপশেখরের বাবা মধুসূদন দত্ত পেশায় জমির কারবারি। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই ছেলে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ও এমন একটা অপরাধে কোনও ভাবেই যুক্ত থাকতে পারে না বলেই আমার স্থির বিশ্বাস।” দীপশেখরের মা সঙ্গীতা দত্ত বলেন, “সকালেই জানলাম আমার ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু, ও কোনও ভাবে এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না। বরং ও হয়তো ছেলেটিকে (স্বপ্নদীপ) সাহায্য করতে গিয়েছিল। আমাকে ফোনেও সেকথা জানিয়েছিল। বলেছিল, ও (স্বপ্নদীপ) খুব ভয় পেয়ে আছে। ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি। আমি ওর পাশে আছি।” তাঁর দাবি, স্বপ্নদীপ তাঁর ছেলের সাহায্য চাইতেন। দীপশেখরের মায়ের কথায়, “আমার ছেলে ওকে বলত- আমি আছি। তোর কিচ্ছু হবে না। তুই ভয় পাস না।” এর পরেই ধৃতের মায়ের সংযোজন, “আমার ছেলে এ সব করতে পারে না। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই, ও এমন কিছু করেছে, তা হলে শাস্তি পাক। কিন্তু আমি জানি, ও এমন কিছু কোনও মতেই করতে পারে না।’’ দীপশেখরের মায়ের আরও দাবি, স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর ছেলের সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা হয়। তখন ছেলে তাঁকে বলেছেন যে, তিনি অনেক বোঝাতেন স্বপ্নদীপকে। দীপশেখর নাকি মাকে এটাও বলেছেন যে, হস্টেলে র‌্যাগিং হয়, এটা আগে বড়দের মুখে শুনে সব সময় ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত স্বপ্নদীপ। তাঁর কথায়, “ছেলেটি ঘরোয়া। অত চালাক নয়। ওই সব শুনেই ও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আমার ছেলে ওর পাশে ছিল বলে জানিয়েছে।” দীপশেখরের বাবা মধুসূদন দত্ত এও বলেন, “আমি চাই প্রকৃত দোষীরা যেন শাস্তি পায়। তার মধ্যে যদি আমার ছেলেও থাকে, তবে সেও শাস্তি পাক। এক জন বাবা হিসেবে অন্যের কোল খালি হয়ে যাওয়া আমিও সহ্য করতে পারছি না! কিন্তু, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমার ছেলে নির্দোষ। এখন তদন্তের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করতেই পারে। সত্যিটা সামনে আসুক।”

thebengalpost.net
দীপশেখর দত্ত :