দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: সমস্ত বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী তো দূরের কথা, শুক্রবার রাত্রি অবধি অর্ধেক বুথেও দেখা নেই তাঁদের। এই চিত্র শুধু জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর কিংবা ঝাড়গ্রামের নয়, রাজ্য জুড়ে একই অভিযোগ ভোটকর্মীদের। তবে, বুথ প্রতি রাজ্য সরকারের একজন সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে। বেশিরভাগ ভোটকর্মী আপাতত তাই নিজেদের এই বলেই সান্ত্বনা দিছেন যে, “চেয়েছিলাম মোদীর বাহিনী, খুশি থাকতে হল দিদির বাহিনী নিয়েই।” সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলার স্পর্শকাতর বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান মোতায়ন করা হয়েছে। তবে, তাঁরা কেউই ভোটকর্মীদের সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে ভোটকেন্দ্রে যান নি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে স্পর্শকাতর বুথগুলিতে পাঠানো হয়েছে তাঁদের। অন্যদিকে, ৮২২ কোম্পানির মধ্যে অর্ধেক কোম্পানি এখনো রাস্তায় আছেন বলে জানা গেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে যেমন ৪০ কোম্পানির মধ্যে ২০ কোম্পানি আগেই পৌঁছেছেন। বাকি ২০ কোম্পানি আসছেন! তবে, তাঁদের পৌঁছেতে পৌঁছতে শনিবার হয়তো অর্ধেক ভোট কিংবা পুরো ভোট প্রক্রিয়াই শেষ হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কাই করছেন ভোটকর্মীরা!
অন্যদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর আসতে শুরু করে। মেদিনীপুর সদর ব্লক, গড়বেতা, চন্দ্রকোনা রোড, সবং থেকে শুরু করে ‘অশান্তির রাজধানী’ কেশপুর! কোথাও বিজেপি, কোথাও আবার সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার সন্ধ্যাতেই বিজেপি-তৃণমূলের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছে কেশপুর। জানা যায়, কেশপুর ব্লকের ১৫ নম্বর অঞ্চলের বাগরুই এলাকায় শুক্রবার বিকেলে তৃণমূল-বিজেপি’র সংঘর্ষে দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় বাগরুই এলাকায় তৃণমূলের লোকজন গিয়ে হামলা চালায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর। এতেই বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে । বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মারে আহত হয়েছেন চারজন বিজেপি কর্মী সমর্থক। অপরদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাঁদেরও চারজন কর্মী-সমর্থক আহত। কেশপুর ব্লকের তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী মহম্মদ রফিক এদিন মেদিনীপুর হাসপাতালে এসে এই ঘটনার জন্য পুলিশকে ফোনে শাসানিও দেন। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন যে এলাকায় গোলমাল হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের মারে আহত হয়েছেন তৃণমূলের চারজন কর্মী সমর্থক। সচেতন জেলবাসী প্রশ্ন, কেশপুরে তবে কি ভোটের আগের দিন থেকেই খেলা শুরু হয়ে গেল? বিজেপির জেলা সভাপতি তন্ময় দাসের কটাক্ষ, “কেশপুরে তো নামমাত্র ভোট হচ্ছে, পুলিশকে দল-দাস বানিয়ে রেখে। বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের প্রার্থীই দিতে দেয়নি! বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে আবার নির্লজ্জের মত ওরা বিজয় উৎসব পালন করেছে ভোটের আগেই! তবে, নামমাত্র যে ক’টাতে ভোট হবে, সেখানেও যে বিজেপি কঠিন লড়াই দিতে প্রস্তুত, তা বুঝতে পেরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।” শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতেও বিজেপি কর্মীরা রক্তাক্ত ও আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের। সিপিআইএমের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, সবংয়ে ভোটারদের আতঙ্কে রাখতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যদিও, এই প্রতিটি অভিযোগই অস্বীকার করা হয়েছে জেলা তৃণমূলের তরফে।