দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জুন: চারজনই ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজের প্রাক্তনী। বয়স ও অভিজ্ঞতার নিরিখে কেউ তুলনায় নবীন, আবার কেউ প্রবীণ ও পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। তবে, চারজনই নিজেদের সময়ে দাপটের সাথে ছাত্র-রাজনীতি করেছেন। আর, চারজনই এখন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাপুটে নেতা। তাতে অবশ্য সৌজন্যে ভাটা পড়েনি কোনদিনই। পড়বেই বা কি করে! চারজনই যে বিপ্লব-সংগ্রাম-শিক্ষা-দীক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সৌজন্যের পীঠস্থান মেদিনীপুরের সন্তান। তাই, মনোনয়ন পর্ব হোক কিংবা প্রচার পর্ব অথবা রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্ক, সব জায়গাতেই বজায় থাকে শালীনতা ও সৌজন্য। তাঁরা সকলেই রাজনীতিতে হিংসা ও মারামারির বিরোধী। সুস্থ রাজনীতির ধারক ও বাহক মেদিনীপুরের সেই মাটিতেই বুধবার ফের বাম (সিপিআইএম), কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূলের চার নেতাকে দেখা গেল সৌজন্যের রাজনীতি মেলে ধরতে।
মনোনয়ন-পর্বে দলীয় কর্মীদের সাহায্য করার মাঝেই বুধবার ভরদুপুরে জেলা কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা ও মেদিনীপুর পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দীনেন রায়, বিজেপির জেলা মুখপাত্র ও সহ-সভাপতি অরূপ দাস এবং সিপিআইএমের সদর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক সোমনাথ চন্দ মেদিনীপুর সদর বিডিও অফিস কার্যালয়ের ক্যান্টিনে একসাথে চা খেতে খেতে ডুব দিলেন নিজেদের প্রিয় কলেজের (মেদিনীপুর কলেজের) ছাত্র রাজনীতির সেই দিনগুলোতে। উল্লেখ্য, গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবারই সৌজন্যের অনন্য নিদর্শন তুলে ধরেছিলেন শালবনী ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরাও। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাতে তাঁরা তুলে দিয়েছিলেন ঠান্ডা জল ও ORS। আর, বুধবার রাজনীতিতে অহিংসা ও সৌজন্যের বার্তা তুলে ধরে মেদিনীপুর সদর বিডিও অফিস কার্যালয় থেকে শাসক ও বিরোধী দলের চার নেতা বললেন, “রাজনীতি তো এমনই হওয়া উচিত। মতাদর্শ আলাদা হতে পারে; কিন্তু, পারস্পরিক সৌজন্যে ভাটা পড়া উচিত নয়। সকলেই আমরা মানুষের জন্য আন্দোলন করি, লড়াই করি। তা করতে গিয়ে কখনোই নিজেদের মনুষ্যত্ব বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে ভিন্ন ভিন্ন নীতি ও আদর্শ নিয়ে রাজনীতি চলতে থাকুক।” মনোনয়ন ঘিরে ভাঙড়, সিউড়ি, ডোমকল সহ বিভিন্ন জায়গায় যখন উত্তেজনা, অশান্তির আবহ; ‘সৌজন্যের পীঠস্থান’ মেদিনীপুর থেকে তখনই এলো অহিংসার বার্তা। জেলা কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতা তথা প্রবীণ রাজনীতিবিদ শম্ভুনাথ চ্যাটার্জী বললেন, “হিংসা দিয়ে কখনো ভালো কিছু করা যায় না, তা সে রাজনীতি হোক কিংবা সমাজনীতি। আমরা মেদিনীপুরের রাজনৈতিক কর্মীরা এই হিংসার বিরোধী!”
উল্লেখ্য যে, শুধু এবারই নয়, গত বিধানসভা নির্বাচন কিংবা পৌরসভা নির্বাচনেও সৌজন্যের নজির তুলে ধরেছিলেন মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীরা। গত নভেম্বর (২০২২) মাসেও মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক-মেলবন্ধন দেখেছিল শহর মেদিনীপুর। যেখানে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষদের সঙ্গে একই প্যানেলে থেকে জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেসের শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, বাম শিক্ষক সংগঠনের নেতা সুব্রত কুমার পান প্রমুখ। মেদিনীপুর শহরের আপামর সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকরাও বলছেন, “বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু কিংবা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর বরাবরই ব্যতিক্রম। শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতি আর সৌজন্য বিসর্জন দিয়ে রাজনীতি করার পক্ষপাতী নয় মেদিনীপুর। আর, মেদিনীপুর আজ যা ভাবছে, গোটা বাংলা আগামীকাল তা ভাববে!”