দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ জুন:”সবে সন্ধ্যা। টিফিন সেরে মুখ ধুয়ে আসনে বসতে যাব হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ আর ঝাঁকুনি! অন্ধকার আর আর্তনাদ মিলেমিশে একাকার। জ্ঞান ফিরতে দেখি পায়ে রড গাঁথা অবস্থায় জেনারেল কামরার জানালা থেকে ঝুলছি!” রবিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের বাইরে বসে দুঃস্বপ্নের ট্রেন যাত্রার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সঞ্জয় দত্ত। বাড়ি ব্যারাকপুরের শ্যামনগরে। রাজমিস্ত্রির কাজ করতে অন্ধ্রপ্রদেশ যাচ্ছিলেন। সঙ্গী রবি বিশ্বাস চিকিৎসাধীন ভুবনেশ্বর হাসপাতালে। সঞ্জয়-কে প্রথমে বালেশ্বরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শনিবার আরও অনেকের সঙ্গে তিনিও অ্যাম্বুলেন্সে চড়ে চলে আসেন মেদিনীপুর মেডিকেলকলেজে।
সঞ্জয় বলেন, “এখানে খুব ভালো চিকিৎসা করা হচ্ছে।” বাড়ির লোকজন এসেছিলেন। কিছুটা সুস্থ হলেই বাড়ি ফিরবেন। ডান পায়ে, মাথায় ও হাতে চোট লেগেছে। সঞ্জয়ের প্রশ্ন, “তাঁদের মতো শ্রমিক, যাঁরা ঘাম ঝরিয়ে ইমারত গড়েন, তাঁরা জীবনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবেন! তাঁদের দায়িত্ব কি রেল নেবে?” অন্যদিকে, শনিবার থেকেই মেদিনীপুরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। দিনভর সেখানে থেকে সবকিছু খোঁজখবর নিচ্ছেন জেলাশাসক খুরশেদ আলি কাদেরি, জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী। শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘুরে যান রাজ্যের সচিব সৌমিত্র মোহন ও সঞ্জয় বনশল।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে জেলাশাসক জানান, “এই জেলা থেকে ১১৬টি এম্বুলেন্স, ২৫টি মিনিট্রাক ও ২৪টি বাস পাঠানো হয়েছিল।অতিরিক্ত জেলাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য আধিকারিকদের পাঠানো হয়েছে বাংলা -উড়িষ্যা সীমান্তে দাঁতনে।” এও জানান, আহতদের চিকিৎসার সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিহতদের দেহ ময়নাতদন্তের পর বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বালেশ্বরের বাহানাগা’র ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত ১৫৭ জনকে রবিবার সন্ধ্যা অবধি আনা হয়েছে এই জেলায় অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। এছাড়াও, ২৭টি মৃতদেহ এসেছে এই জেলায়। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ১১ জন এবং খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ১৬ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তাঁরা সকলেই ভিন জেলার বাসিন্দা। অন্যদিকে, আহত ১৫৭ জন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পাশাপাশি সবং, পিংলা ও বেলদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছন। ইতিমধ্যে অবশ্য ৮৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। ৪ জনকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ (১১) ও খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতালে (১৬)- মোট ২৭টি দেহ ময়নাতদন্তের পর তুলে দেওয়া হয়েছে পরিজনদের হাতে।