দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ মে: “জুন কিন্তু এলাকায় ঘোরে। সুজয় তুমি কিন্তু জুনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে। জুন আমাদের সংস্কৃতি-মঞ্চের একটি মেয়ে। খুব পপুলার মেয়ে। আর যদি না কর (ভাল ব্যবহার), তাহলে আমাকে কিন্তু বাধ্য করোনা কোনো ব্যবস্থা নিতে!” শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীতে অনুষ্ঠিত তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচির মঞ্চ থেকে ঠিক এভাবেই মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরা-কে মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া’র সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ (বা, বিরোধ) মিটিয়ে নেওয়ার ‘বার্তা’ দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য যে, দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিধায়ক জুন মালিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একেবারে ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে বা পছন্দের তালিকায় থাকা শিল্পী ও জনপ্রতিনিধি। অন্যদিকে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা আবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এবং দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। তরুণ-প্রজন্মের নেতা সুজয়-কে অভিষেক পছন্দ করলেও, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও তাঁকে (সুজয় হাজরা-কে) দলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি এবং জুন মালিয়া’র সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’মেটানোর বার্তা দিয়েছেন। এদিন, ফের একবার ‘সতর্ক’ করলেন সুজয়-কে।
জেলা তৃণমূলের একটি বড় অংশের দাবি, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জুন মালিয়া-কে বিধায়ক হিসেবে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে দলের তৎকালীন জেলা সাধারণ সম্পাদক সুজয় হাজরা এবং মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তবে, জয়ী হয়ে আসার পর, বিভিন্ন কারণে তাঁদের সঙ্গে জুনের দূরত্ব বাড়ে! পরিবর্তে, দলের তৎকালীন জেলা (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের) সভাপতি এবং বর্তমানে জেলা আহ্বায়ক (কো-অর্ডিনেটর) অজিত মাইতি এবং প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা (বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন) তথা বর্তমানে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। এই দুই ‘লবি’ বা ‘গোষ্ঠী’র মধ্যে ‘বিরোধিতা’ এখন জেলার রাজনীতিতে সর্বজনবিদিত। দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, জুন মালিয়া এবং অজিত মাইতি-কে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন এবং তাঁদের সব কথা ‘বিশ্বাস’ করেন! অন্যদিকে, সুজয়-কে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বেছে নেওয়া হয় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে। প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক থাকলেও, কয়েকমাস পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে জুন-সুজয়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। সুজয়ের নামে ‘দিদি’র কাছে ‘অভিমান’ বা ‘অনুযোগ’ পৌঁছতে শুরু করে বলেও দাবি সুজয়-ঘনিষ্ঠ নেতাদের! যদিও সুজয়ের দাবি, “আমি প্রথম দিন থেকেই নিজের কাজ করে চলেছি। কারুর সঙ্গে আমি কখনোই খারাপ ব্যবহার করিনি, করবওনা।”
শনিবার অবশ্য দিদির অনুযোগে খুশি সুজয়। তাঁর মতে, “উনি আমার মাতৃসমা। আমাদের সকলের প্রিয় দিদি। জুন দি-ও আমার দিদি। বড় দিদি সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। ওঁর বকাঝকা, আমাদের কাছে আশীর্বাদ!” এই বিষয়ে বিধায়ক জুন মালিয়া অবশ্য বিশেষ কিছু বলতে চাননি। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে তাঁর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-কে। অন্যদিকে, পিংলার বিধায়ক তথা দলের বর্তমান জেলা আহ্বায়ক অজিত মাইতি সম্পর্কে শনিবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অজিত আমাদের দলের অনেক পুরানো কর্মী। আমার দলের সহকর্মী। কেউ কেউ তো ওকে এখন মানেনা! অজিতকে পাত্তাও দেয়না। আর, অজিতেরও একটা দোষ আছে। একটু ‘গ্রুপিজিম’ (দলবাজি/গোষ্ঠী) করা। অজিত তুমি এসব বন্ধ কর, ভাল করে কাজ কর। দেখবে তোমাকে সবাই মানবে।” এদিন, শালবনীর বিধায়ক ও প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত (কুড়মি-আন্দোলন ইস্যুতে), কেশপুরের বিধায়ক ও প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা (গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব), গড়বেতার বিধায়ক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা-দেরও বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক ও জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায় এবং মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া-কে আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়ার বার্তা দেন মমতা। কেশপুর, কেশিয়াড়ি, গড়বেতা, খড়্গপুর, ডেবরা, নারায়ণগড়, মোহনপুরের কোন্দল মেটানোর পরামর্শ দেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।