দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ মে: বাবা পেশায় ছিলেন সামান্য এক কৃষক। অভাব নিত্য সঙ্গী হলেও, মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন তিনি। চেষ্টা করে গেছেন সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করতে। তাই, পড়াশোনায় যেমন সর্বদা উৎসাহ দিয়ে গেছেন, তেমনই শিখিয়েছেন নাচ ও গান। টানাটানির মধ্যেও বাবা, মা, ঠাকুমা, ভাইকে নিয়ে দিব্যি চলছিল সংসারও। হঠাৎই ছন্দপতন হয় ২০২১ সালে! অতিমারী বা করোনার সময়ে নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হয় বাবার। এরপর থেকেই জীবন-যুদ্ধে এক নতুন লড়াই শুরু হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় ব্লকের কাঁটাগেড়িয়া এলাকার সোমা রাউত’র। তবে, শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন সোমা! নিজের জেদ ও অধ্যাবসায়কে সঙ্গে নিয়ে বাবার মৃত্যু-শোক মনের মধ্যে চেপে রেখেও উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০’র মধ্যে ৪৩৫ (৮৭ শতাংশ নম্বর) পেয়েছে নারায়ণগড় প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার এই মেয়ে।

thebengalpost.net
মা ও ঠাকুমার সঙ্গে সোমা :

ছোট থেকেই মেধাবী সোমা। বাবা চাষবাস করতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকে মেয়েকে গানের তালিম দিতেন। গানের গলাও বেশ তার। করোনা কালে যখন একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয় সোমা, তখনই তার বাবাকে হারায়। এরপর থেকে মা’ ই ভরসা ছিল সোমার কাছে। পড়াশোনায় সাহায্য করত তার জেঠতুতো দাদাও। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবার লড়াই শুরু হয়েছিল একাদশ শ্রেণী থেকে। এরপর, নিজের জেদ, সাহস আর অধ্যাবসায়-কে সঙ্গে নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে সে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের রাজা ঋষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষানিকেতনের কলা বিভাগের ছাত্রী সোমা। স্কুল এবং দু’এক জন গৃহ শিক্ষকের সহায়তায় আজ সফল প্রত্যন্ত অঞ্চলের সোমা রাউত। বড় হয়ে শিক্ষকতা করতে চায় সে। বাবার ইচ্ছে ছিল গান নিয়েও পড়াশোনা করুক তার মেয়ে। তাই, পড়াশোনার সাথে গানের চর্চাও চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। পরিবারের বক্তব্য, ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও মনোযোগী সোমা। তবে, সরকারি কিংবা বেসরকারি সহায়তা পেলে সফলতার শিখরে পৌঁছতে পারবে তাঁদের বাড়ির মেয়ে।