দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মে: শরীরে বাসা বেঁধেছে বিরল স্নায়বিক ব্যাধি। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রোপি বা এসএমএ (Spinal Muscular Atrophy)। সারা ভারতবর্ষে যে রোগে মাত্র ৫০০-৬০০ জন আক্রান্ত, আর এ রাজ্যে (পশ্চিমবঙ্গে) বড়জোর ৫০-৬০ জন! সেই বিরল স্নায়বিক রোগ (SMA) নিয়েই জীবন-যুদ্ধের প্রথম বড় লড়াইয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হলো পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘মেধাবী কন্যা’ স্বর্ণাভা বেরা। কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর সংলগ্ন সাহসপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার প্রায় ৯৪ (৯৩.৮৬) শতাংশ নম্বর নিয়ে মাধ্যমিক পাস করল স্বর্ণাভা। সাহসপুরের স্বর্ণাভা’র প্রাপ্ত নম্বর ৬৫৭ (৭০০’র‌ মধ্যে)। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই বিরল এই স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে সে। হাঁটতে-চলতে পারেনা। পরীক্ষার হলে মেঝেয় বসে পরীক্ষা দিয়েছে স্বর্ণাভা।‌‌ স্কুলের মতো পরীক্ষার হলেও বাবা তাকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসতেন এবং নিয়ে যেতেন। এভাবেই, সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে জীবন-যুদ্ধে এগিয়ে চলেছে সাহসপুরের এই ‘সাহসিনী’!

thebengalpost.net
স্বর্ণাভা :

স্বর্ণাভা চিকিৎসক হতে চায়। অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়।‌ যদিও, মাধ্যমিকে অঙ্কে একটু নম্বর কম হয়ে গেছে বলে মন খারাপ তার। স্বর্ণাভা অঙ্কে পেয়েছে ৯৩। জীবন বিজ্ঞানে ৯৯ এবং ভৌত বিজ্ঞানে ৯৬ পেয়েছে সে। ইতিমধ্যে, ওই স্কুলেই (সাহসপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে) বিজ্ঞান নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে স্বর্ণাভা। জীবন-যুদ্ধে হার না মেনে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চায় স্বর্ণাভা। আর, মেয়ের এই ‘স্বপ্ন’ নিয়েই দুশ্চিন্তায় বাবা সর্বরঞ্জন ও মা সোমা! সর্বরঞ্জন বেরা পেশায় একজন কৃষক। তাঁর স্ত্রী সোমা স্বাস্থ্য দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক একটি কাজ করে। তাঁদের দুই মেয়ে। ছোটো মেয়ের বয়স ৭। সর্বরঞ্জন ও সোমা জানান, “ওর যখন ১০ বছর বয়স, তখনই আমরা জানতে পারি ও বিরল এই রোগে আক্রান্ত। আগে এই রোগের কোন চিকিৎসা বা ওষুধ ছিল না। এখন ওষুধ বেরিয়েছে। তবে, তা বিদেশ থেকে নিয়ে আসার অনেক খরচ। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় কিছু ওষুধপত্র আমরা মাঝেমধ্যে পাই, এই যা। কলকাতায় একটা অস্ত্রোপচারের বিষয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেটারও খরচ ১৮-১৯ লক্ষ টাকা। আমাদের পক্ষে এখন আর তা সম্ভব নয়।” সাহসী মেয়ে স্বর্ণাভা অবশ্য থামতে চায়না, সব বাধা পেরিয়েই সে এগিয়ে যেতে চায়! বাকিটা অবশ্য ‘সর্বশক্তিমান’ ঈশ্বরের উপরই ছেড়ে দিতে চান সর্বরঞ্জন ও সোমা। (স্বর্ণাভা’র পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর- 6294326547।)