দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মে: সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের বিদ্রোহে সরতে হয়েছিল প্রদীপ সরকারকে। সম্প্রতি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর পৌরসভার নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ৭নং ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষকে। তিনিই পৌরসভার ইতিহাসে প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান। তবে, দলের এই সিদ্ধান্তে যে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন প্রদীপ ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মীরা, তা বলাই বাহুল্য। বৃহস্পতিবারের ঘটনা যেন প্রদীপ অনুগামীদের সেই ছাই চাপা আগুনেই রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটালো! অভিযোগ, প্রদীপ ঘনিষ্ঠ শহর যুব তৃণমূলের সভাপতি সোনু সিং পৌরসভার চুক্তিভিত্তিক কর্মী হওয়া সত্ত্বেও, তাঁকে ‘ঘাড়ধাক্কা’ দিয়ে পৌরসভা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতি খড়্গপুর পৌরসভার সামনে! নতুন চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ, ভাইস চেয়ারম্যান তৈমুর আলি খান সহ খড়্গপুর পৌরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সোনু সিং সহ প্রদীপ অনুগামী কর্মীরা। এমনকি, পৌরসভার ভেতরে ঢুকে তাঁরা ধুন্ধুমার কান্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে কুৎসিত শব্দ প্রয়োগ করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ খড়্গপুর টাউন থানায় প্রদীপ ঘনিষ্ঠ সোনু সিং, মহিলা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা সিং সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান (পৌরপ্রধান) কল্যাণী ঘোষ লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানা যায়।
প্রসঙ্গত, খড়্গপুর শহরের যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সোনু সিং গত কয়েক বছর ধরে পৌরসভার অ্যাকাউন্ট বিভাগে চুক্তিভিত্তিক বা কন্ট্রাকচুয়াল কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু, সোনুর কাজ করার কথা পাম্প অপারেটর হিসেবে, এই দাবি তুলে বৃহস্পতিবার তাঁকে পৌরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ পৌরসভার অ্যাকাউন্ট বিভাগ থেকে স্থানান্তরিত করার কথা বলেন। অন্য বিভাগে যাওয়ার কথা শুনেই তৃণমূলের যুব নেতা তথা খড়্গপুর পৌরসভার কন্ট্রাকচুয়াল কর্মী সোনু সিং প্রতিবাদ করেন এবং ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এরপরই, চেয়ারম্যান এবং যুব নেতা উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। সেই সময়ই, যুব নেতাকে সিকিউরিটি দিয়ে ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন চেয়ারম্যান। এমনটাই অভিযোগ যুব তৃণমূলের শহর সভাপতি তথা চুক্তিভিত্তিক কর্মী সোনু সিংহের। এদিকে, ‘ঘাড় ধাক্কা দিয়ে’ পৌরসভা থেকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চেয়ারম্যান এই অভিযোগ তুলে যুব তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা খড়্গপুর পৌরসভার গেটের সামনে বিকেল থেকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পৌঁছে যান প্রদীপ সরকার ঘনিষ্ঠ শহরের মহিলা নেত্রী প্রিয়াঙ্কা সিং সহ আরো অনেকে।
‘চেয়ারম্যানকে ক্ষমা চাইতে হবে’ এই দাবিতে তাঁরা খড়্গপুর-কেশিয়াড়ি রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিতে পৌঁছন প্রাক্তন পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার এবং বর্ষীয়ান নেতা জহর পাল। কিন্তু, যুবনেতা সোনু সিং তাঁদের সরিয়ে দিয়ে পৌরসভার গেটের ভেতরে ঢুকে উপ পুরপ্রধান তৈমুর আলি খানকে সামনে পেয়ে ‘বিজেপির দালাল’ বলে আক্রমণ করেন! সোনু’র অভিযোগ, “আমি প্রদীপ ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আমাকে এখন খড়্গপুর পৌরসভা থেকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। আজ আমাকে পৌরসভার এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন চেয়ারম্যান। আমি না মানায়, আমাকে সিকিউরিটি দিয়ে ঘাড় ধাক্কা মেরে বের করার কথা বলেন চেয়ারম্যান। যতক্ষণ না চেয়ারম্যান কল্যাণী ঘোষ আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।” অন্যদিকে, তৃণমূলের যুবনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সিং এর অভিযোগ, ‘”শুধু সোনু সিং নয় অন্যান্য মহিলাদেরও কাজ করিয়ে তাঁদের টাকা দিচ্ছে না খড়্গপুর পৌরসভার বর্তমান পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ। এরই প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেছি।” এই বিষয়ে খড়্গপুর পৌরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “সোনুকে উল্টো পাল্টা কথা বলা হয়েছে শুনে আমি ছুটে এসেছি। এসে দেখছি আমাদের যুবকর্মীরা পৌরসভার ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে যাচ্ছিল। আমি তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি। আমি তাদেরকে বলেছি দলের বিষয় দলের মধ্যে বসে কথা বলব।” তিনি আরো জানান যে, তাঁর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে মাইনে দিচ্ছে না বর্তমান কল্যাণী ঘোষের নেতৃত্বাধীন পৌরসভা। সেই বিষয়ে প্রদীপ সরকার স্থানীয় প্রশাসন ও দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে ইতিমধ্যে অভিযোগ করেছেন বলেও জানান। এই বিষয়ে, খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান বা পৌরপ্রধান কল্যাণী ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি সংবাদমাধ্যমে এই বিষয়ে কোন কথা বলবেন না বলে জানান। যদিও, উপ-পৌরপ্রধান তৈমুর আলি খান বলেন, সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে। তাছাড়া, পৌরসভার চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আছে, অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে সরানোর। এদিনের বিক্ষোভের বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে পৌরসভার চেয়ারম্যানের তরফে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও জানা যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা এবং জেলা যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ-কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, দু’জনই জানান, “খোঁজ নিয়ে দেখছি, ঠিক কি হয়েছে!”