তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ এপ্রিল: রেকর্ড গরম। আর, তার সঙ্গে পানীয় জলের জন্য তীব্র হাহাকার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে! খড়্গপুর থেকে শালবনী, মেদিনীপুর থেকে চন্দ্রকোনা সর্বত্র পানীয় জলের সংকট। সম্প্রতি, জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র জানিয়েছিলেন, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ৩৭৯টি নতুন জল প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে এবং এই গরমে অন্তত ২ মাস ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গাড়িতে করে জল পৌঁছে দেওয়া হবে! তবে, আপাতত তেমন কোনো সুরাহা না হওয়ায় শুক্রবার রাজ্য সড়ক অবরোধ করলেন চন্দ্রকোনা ২নং ব্লকের যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দারা। অন্যদিকে, খড়্গপুর গ্রামীণের গোপালী গ্রাম পঞ্চায়েতের শোলাডহর এলাকায় গত ২ বছর ধরে পানীয় জলের সমস্যা। এই দাবদাহের মধ্যে প্রায় দেড়-দু’ কিলোমিটার দূর থেকে জল আনতে হচ্ছে মহিলাদের। একই অবস্থা শালবনী ব্লকের কাশীজোড়া অঞ্চলের যশপুর সহ বিভিন্ন গ্রামেও।
শুক্রবার সকাল থেকে পানীয় জলের দাবিতে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নং ব্লকের যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দারা। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে রাজ্যসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামে রয়েছে তিনটি সজলধারা প্রকল্প। কিন্তু, প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে প্রায় দু’মাস ধরে সজল ধারা থেকে কোন পানীয় জল পড়েনি! একাধিক বার ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে গ্রাম পঞ্চায়েত সকলকেই জানানো হয়েছে। কিন্তু, কেউই কোনো সমাধানের কথা ভাবেননি! শুক্রবার তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দু-তিন ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলার পর, ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিডিও এবং পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। তাঁদের আশ্বাসে বেলা আড়াইটা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়। বিকেল সাড়ে ৩-টা নাগাদ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে গাড়িতে করে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয় পানীয় জলের ট্যাঙ্ক।
অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর ১ নম্বর ব্লকের গোপালী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শোলাডহর এলাকায় প্রায় দুই বছর ধরে পানীয় জলের সমস্যা লেগে রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীদের। পানীয় জলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এই তীব্র গরমে এলাকার মহিলাদের প্রায় দেড়-দু’ কিলোমিটার দূর থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে বহুবার প্রশাসনকে জানানোর পরেও প্রশাসনের কোন হেলদোল বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের! জানা যায়, শতাধিক পরিবার থাকে এই শোলাডহর এলাকায়। এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানীয় জলের কল স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু, সেই কলে আসে না জল! এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এলাকার সীমা পট্টনায়েক নামে এক মহিলা বলেন, “আমাদের এখানে জলের ভয়াবহ সমস্যা। এই তীব্র গরমে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে জল বয়ে নিয়ে আসতে হয়। যে পাড়াতে আমরা জল আনতে যাই, তারা আমাদের বলে তোমাদের কল আছে, তোমাদের জল দেবো না। জল নিতে গেলে লোকের কথা শুনতে হয়। এই গ্রামের ৮০-৯০ টা বাড়ি আছে তারা কেউ জল পায় না। সবাইকে সকাল বিকাল তিন টাইম জল নিয়ে আসতে হয় রান্না খাওয়ার জন্য। আমরা এলাকার পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি। দিদি বলেছিলেন আমরা উপরে অভিযোগ জানাচ্ছি, জলের সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু, দেড় বছর হয়ে গেল সমস্যার সমাধান হয়নি।” শোলাডহর এলাকার পঞ্চায়েত লতিকা মল্লিক জলের সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “সমস্যা শুধু ওদের নয়, আমারও জলের সমস্যা আছে। প্রতিদিন কেউ না কেউ আমাকে অভিযোগ জানান। এত গরমের মধ্যে জল পাচ্ছি না। আমাকেও মিউনিসিপালিটি এলাকায় গিয়ে মাথায় করে জল আনতে হয়। PHE ডিপার্টমেন্ট থেকে জলের লাইন করে দিয়েছে। আমরা সবাই জানি জল পাব। কিন্তু, সেই জলের সমস্যা আবার চলে এসেছে। ১৫০-২০০ পরিবার আছে। প্রত্যেকের বাড়িতেই কল হয়ে গেছে, কিন্তু তাতে জল নেই। PHE অফিস যাওয়ার পরেও আমাদের কোন কাজ হচ্ছে না।” PHE ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বিকাশ দাস বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি। আজ সকালে অভিযোগ পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।”