thebengalpost.net
হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর ভাগ্য নির্ধারিত হতে পারে এপ্রিল মাসেই:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ২৯ মার্চ: এখনও অবধি গ্রুপ- সি’তে ৮৪২, গ্রুপ-ডি’তে ১৯১১,‌ প্রাথমিকে ২৫৭ এবং নবম-শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগে ৭৭৫ জনের চাকরি গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। মূলত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই গিয়েছে চাকরি। তবে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে যোগ্য সঙ্গত করেছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও। এদিকে, দুর্নীতি বা OMR কারচুপির অভিযোগে চাকরি যাওয়া প্রার্থীদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়নি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও। তাই, শেষ পর্যন্ত তাঁরা সকলেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। আপাতত প্রতিটি ক্ষেত্রে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা লম্বা শুনানির ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁরা ভালোভাবে শুনতে চান সব পক্ষের বক্তব্য। এমনকি, এই ধরনের সব মামলাগুলি একজন বিচারপতির এজলাসে (বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চে) শুনানি করার চেষ্টাও চলছে। এর আগে, বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিকের ২৬৯ জনের ‘প্যানেল বহির্ভূত’ চাকরি-বাতিল মামলাতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, চাকরিহারাদের বক্তব্য ভালোভাবে শোনার পর রায় শোনানোর জন্য। সেই মোতাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২৬৯ জনের বক্তব্য শোনেন (তবে, কয়েকজন আদালতের শরনাপন্ন হননি)। শেষ পর্যন্ত ২৫৭ জনের চাকরি পাকাপাকিভাবে বাতিল হয়। মাত্র ৩ জন নিজেদের চাকরি ফিরে পান বলে জানা গেছে। বুধবার (২৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টে সেই বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চেই ছিল চাকরি হারানো ৮৪২ জন গ্রুপ-সি এবং ৭৭৫ জন নবম-শ্রেণীর শিক্ষকদের একাংশের মামলা। সেই মামলাতেই তাঁদের দুঁদে আইনজীবী মুকুল রোহতগী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন।

thebengalpost.net
মুকুল রোহতগী:

এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের সবথেকে পারদর্শী ও বিখ্যাত আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম তথা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন সলিসিটার জেনারেল মুকুল রোহতগী এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, “উনি একের পর এক এক্তিয়ার বহির্ভূত নির্দেশ দিয়েই চলেছেন। প্রাথমিকের মামলাতে আপনি (বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু) নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রার্থীদের বক্তব্য শোনার জন্য। কিন্তু, উনি গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি এবং নবম-দশম কোনো ক্ষেত্রেই ওই শিক্ষক বা শিক্ষা কর্মীদের বক্তব্য শোনার প্রয়োজন মনে করেননি। ১০ মিনিটে, ১ ঘন্টায় হাজার হাজার চাকরি বাতিল করে দিয়েছেন। এমনকি, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মিডিয়াতে ইন্টারভিউও দিয়েছেন। এভাবে চলতে পারেনা!” তাঁর আরও সংযোজন, “যে বিকৃত ওএমআর (OMR) এর কথা বলা হচ্ছে, তা পাওয়া গেছে থার্ড পার্টি নাইসা (NYSA)-র এক প্রাক্তন কর্মীর বাড়ি থেকে। এর বিশ্বাস যোগ্যতা কতটুকু?” তিনি (মুকুল রোহতগী) বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম রুল জারির আবেদনও জানান। বিচারপতিরা এই বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য শুনতে চান। স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে সমস্ত দায় এদিন আদালত এবং সিবিআই এর উপর চাপানো হয়েছে! তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এদিন সিবিআই (CBI) এর কোন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১২ এপ্রিল। ওই দিন সব পক্ষের বক্তব্য ভালো ভাবে শোনা হবে। কেন চাকরি যাচ্ছে, কিভাবে চাকরি যাচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। ওইদিন সিবিআই (CBI)- এর আইনজীবীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। একইসঙ্গে, সিবিআই-কে এদিন নোটিশ জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওএমআর উদ্ধারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ১২ এপ্রিল পেশ করতে হবে।

অন্যদিকে, এদিনই সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরীর ডিভিশন বেঞ্চে ছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরেকটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মানিক ভট্টাচার্য এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের মামলা। গত ২ মার্চ টিনা মণ্ডল এবং ১৮৬ জন প্রার্থীর করা ২০২০ সালের (২০১৪ টেটের ভিত্তিতে) প্রাথমিকে ১৬,৫০০ শিক্ষক-নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একযোগে সিবিআই (CBI) এবং ইডি (ED) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ডিভিশন বেঞ্চও সেই নির্দেশ বহাল রেখেছিল। কলকাতা হাই কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি ও বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই শীর্ষ আদালত বুধবার জানিয়েছে, আপাতত ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ থাকছে। অর্থাৎ ১৬,৫০০ নিয়োগে আপাতত কোনো তদন্ত করতে পারবেনা ইডি এবং সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, তদন্তের শুরুতেই দুই সংস্থার একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীতা কী রয়েছে। সু্প্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, একই মামলায় সিবিআই এবং ইডিকে কেন যৌথ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল? একই সঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা-ও জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত। আগামী শুনানিতে সিবিআই এবং ইডিকে এ বিষয়ে হলফনামা জমা করতে হবে। অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টে এদিন (বুধবার) ২০১৪ টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক-নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল। সেখানে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তীব্র ভর্ৎসনা করেন সিবিআই এর আইনজীবীকে। তিনি বলেন, “আপনাদের এটা জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে? এর থেকে ভালো তো আমি জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারব, কলকাতা হাইকোর্টের যে কোন আইনজীবী এর থেকে ভালো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। ছিঃ ছিঃ! এটা জিজ্ঞাসাবাদ হয়েছে?” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি মন্তব্য করেন, “সব দুর্নীতি এক সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। সেই সমুদ্র থেকে ‘মানিক’ তুলে আনতে হবে!” তিনি সব পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে জানান, “দুর্নীতির সমুদ্রে আপনারা সাহায্য করছেন। তার পরও আমি হাবুডুবু খাচ্ছি। এ তো মহাসমুদ্র। দুর্নীতির মহাসমুদ্র। এই অবস্থায় ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।” এই প্রসঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এ নিয়ে বিস্তারিত শুনানি প্রয়োজন। তিন দিন ধরে মামলার সব পক্ষের বক্তব্য শুনব।” এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৪ এপ্রিল। তারপরই, ৪২ হাজার ৫০০ শিক্ষক নিয়োগের প্যানেল থাকবে, নাকি বাতিল করা হবে সেই বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এও জানিয়েছেন, একজন যোগ্য প্রার্থীরও যাতে চাকরি না যায়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

thebengalpost.net
প্রাথমিকের একটি মামলায় সাময়িক স্বস্তি মানিক ভট্টাচার্যের: