দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ মার্চ: সাক্ষী কি তবে স্বর্গ থেকে নেমে এসে সাক্ষ্য দিলেন? গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন আদালতের ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে শুনানি চলাকালীন ঠিক এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খেল বেশ কিছুক্ষণ! ঘটনাক্রমে জানা যায়, শ্রীমন্ত ঘোড়াই নামের এক ব্যক্তির মামলা চলছিল। যার তদন্তের জন্য চার্জশিট এনেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোহনপুর থানার ASI অভিজিৎ দাস। ওই মামলারই চার্জশিটে ৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে যাঁর নাম রাখা হয়েছিল তিনি ৪ বছর আগেই মারা গিয়েছেন! অথচ, কেস ডায়েরিতে উল্লেখ আছে, গত ২ সেপ্টেম্বর (২০২২) তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছেন তদন্তকারী অফিসার অভিজিৎ দাস! এরপরই, বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন শ্রীমন্ত ঘোড়াইয়ের স্ত্রী সবিতা ঘোড়াই। তারপরই, হতবাক হয়ে যান আদালত কক্ষে থাকা সকলে! ক্ষুব্ধ বিচারক মিফতাহুল ইসরার মোহনপুর থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অভিজিৎ দাস সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারকে। যদিও, ওই দিনই আদালতে লিখিত আকারে ভুল স্বীকার করে নেন তদন্তকারী অফিসার।

thebengalpost.net
মোহনপুর থানার পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিচারক:

জানা যায়, গজেন্দ্র মহানা নামে ওই সাক্ষী ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কোর্টের পাঠানো সমনে সই করেন “মৃত” সাক্ষী! এই অবস্থায়, গত মঙ্গলবার (২১ মার্চ) কোর্টে বিষয়টি আসার পর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শ্রীমন্ত ঘোড়াইর স্ত্রী সবিতা ঘোড়াই জানিয়ে দেন, এই ভুয়ো সাক্ষীর বিষয়টি। এরপরই, ওইদিনের শুনানিতে মোহনপুর থানার IC স্বরাজ রায় চৌধুরী সহ সমন প্রেরক ASI দেবীপ্রসাদ ভূষন, তদন্তকারী অফিসার তথা ASI অভিজিৎ দাস এবং সমন প্রেরক কনস্টেবল শেখ মহম্মদ আয়ুবকে তলব করে দাঁতন কোর্ট। পাশাপাশি, তাঁদের কাছ থেকে পুরো বিষয়টিও জানতে চাওয়া হয়। কোর্টের তরফে সরাসরি বিষয়টি জানতে চাওয়া হয় মোহনপুর থানার IC স্বরাজ রায় চৌধুরীর কাছে। তখন IC বিষয়টি মেনে নেন। তদন্তকারী অফিসার অভিজিৎ দাস ‘ভুল’ স্বীকার করেন। তিনি জানান, ‘গজেন্দ্র’র জায়গায় ‘রাজেন্দ্র’র নাম হতো। অনিচ্ছাকৃত ছাপার ভুল বা প্রিন্টিং মিসটেক হয়েছে। কিন্তু, সই কে করল? স্বাভাবিকভাবেই, পুলিশের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। এই পরিস্থিতিতে দাঁতন আদালতের ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট মিফতাহুল ইসরার পশ্চিম মেদিনীপুরের SP-র কাছে ASI দেবীপ্রসাদ ভূষন, তদন্তকারী অফিসার অভিজিৎ দাস এবং সমন প্রেরক কনস্টেবল শেখ মহম্মদ আয়ুবের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। শুধু তাই নয়, IC স্বরাজ রায় চৌধুরীকে সতর্ক করার নির্দেশও দেন। পাশাপাশি, SP কি পদক্ষেপ নিলেন, সেটাও আগামী ২৪ এপ্রিলের শুনানিতে অর্থাৎ পরবর্তী শুনানিতে জানাতে হবে বলেও জানিয়েছে আদালত।